জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

বুধবার, ২৭ জুলাই, ২০১১

আমি আর ফিরব না

আকাশ ছেয়ে যাওয়া পাখির দল
ক্লান্ত কিনা তা আমার জানা নেই
উন্মাদ শীতল ঝড়ো হাওয়া
অজস্র জলরাশির সমুদ্র
দিন রাত্রির বিভ্রান্ততা পেরিয়ে
বার বার ছুটে আসতে আসতে আমি ক্লান্ত

বদলে যাওয়া চেনা রাস্তা
বাসার মুখের প্রিয় সেই গলি
সময়ের অবহেলায় রং হারানো প্রিয় নিবাস
ঘুণে খাওয়া চৌকাঠের দুয়ার
এসব আমাকে অস্থির যন্ত্রণা দেয়

সময়কে বীজকোষে বেধে যাই
প্রত্যেক বিদায়ের আগে
অথচ ভুলে যাই সময়কে তো বদলাতে হয়
তার সাথে বদলাতে হয় প্রিয় মানুষগুলোর
হারাতে হয় অনেক মানুষের
হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায় না আগের মতন
নাগরিক জ্যামে সবাই আটকে আছে
মুঠোফোনের দাপটে হয়না
প্রিয় মানুষগুলোর কোলাহলে সন্ধ্যা
এসব শুধুই আমাকে হতাশ করে

এখন ফিরলে দেখি না
ছাদে রোদ-তপ্ত আচারের সুবাস
বারান্দায় ধুলো জঞ্জাল
আকাশে ঘুড়ির লড়াই
বৃষ্টি জলের নদীতে কাগজের নৌকা!

এতটা অনেকটা ভিড়েও অবাক নিঃসঙ্গতা
আমি ফিরে যেতে চাই
তবুও আমার আর ফেরা হবে না
শূন্যতা আর স্মৃতির মাঝে ফিরতে ভালো লাগে না
বারবার নিজেকে অপরাধী মনে হয় চলে যাবার জন্য
এই শহর মনে করিয়ে দেবে বার বার কি হারিয়েছি
তাই আমি ফিরব না!

শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০১১

প্রেক্ষিত

আমি দেখেছি
আমার প্রজন্মের অগণিত জ্বলছে অনিশ্চয়তা দুঃখ, দুর্দশা আর হতাশায়
এলোমেলো পায়ে আগাচ্ছে আবার পিছচ্ছে গৃহহীন বদ্ধ উন্মাদের মত
অসংখ্য বোঝা নিয়ে তারা ভবঘুরে
গন্তব্য জীবনের এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্ত

আমি দেখেছি
কর্পোরেট কৃতদাসেরা মুখে হাসির ব্যানার লাগিয়ে ডেস্ক নামক জেলে বন্ধী
প্রতি সকালে ব্যতিব্যস্ত তারা ছোটে গুরুগম্ভীর ক্ষেপানাস্রের মত
অথচ ভেতরে সবাই চলছে খুড়িয়ে খুড়িয়ে অসহায় খোঁড়া ত্রিপেয় কুকুরের মত
তাদের চকচকে আমদানিকৃত উঁচু ব্র্যান্ডের লেবাস তাদের স্বত্বাকে নিয়মিত পড়ায় মুখোস
অযথা সুবাস ছড়ানো দামী অথবা নকল ফ্রেগ্রেন্স চেপে ধরে নিশ্বাস
তারা কথা বলে মার্জিত, তাদের কথোপকথনে লুকিয়ে থাকে অসংখ্য হিসাব-নিকাশ
অথবা যাবতীয় অনাকাঙ্ক্ষিত বস্তা বোঝাই গ্লানি

আমি দেখেছি
বেকার কিছু বিভ্রান্ত আত্মা
দৈনিক পত্রিকা ঘেঁটে খুঁজছে জীবনের গন্তব্য
জুতোর তলা ক্ষয়ে ক্ষয়ে এখন তাদের হৃদয়ে ধরেছে ক্ষয়
বাসা থেকে শুরু করে এলাকা সুদ্ধ সবাই তাদের খুঁচিয়ে কথা বলে- সামনে অথবা পেছনে
তবু তারা পকেটে ছেড়া দুটি দশ টাকার ও একটি দুটাকার নোট নিয়ে মাথা নুয়ে হেটে চলে
ইস্কুলে থাকতে গল্পে শুনেছে "অদম্য ইচ্ছার হয় জয়"
কিন্তু আজ তারা জেনেছে ইস্কুলেও কত মিথ্যে আশ্বাস দেয়া হয়

আমি দেখেছি
আমার প্রজন্মের কত মাদকে মাদকে হারিয়ে গিয়েছে চিরতরে
এখন তাদের পাওয়া যায় 'স্পট' নামক অভিশপ্ত জঙ্গলে-
তাদের প্রাণহীন নিথর দেহ আর রক্তাক্ত নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে অযথাই ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে
পরিচিত সবাই এখন ভিনগ্রহী- পরিবার, বন্ধু, প্রিয়জন
এখন তারা জলাতঙ্কিত বেওয়ারিশ কুকুরের মত- এড়িয়ে তাদের চলছে সবাই

আমি দেখেছি
অগণিত স্বপ্ন ব্যস্ত নগরীর রাস্তা পেরুতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনার স্বীকার
আলোহীন অন্ধ-গলিতে পথ খুঁজতে গিয়ে আততায়ীয়ের ছুরিকাঘাতে রক্তাক্ত
কিংবা এইসব স্বপ্ন আটকে আছে জট খুলবে না এমন কোন জ্যামে

আমি দেখেছি
আশার খোঁজে এই নগরীর ধোয়া ঠেলে আকাশে তাকায় বিধাতার তরে
সেখানে আকাশে আকাশে সংঘর্ষে গুড়ো কাঁচের মত ঝর-ঝর করে ভাঙ্গে অনাথ আকাঙ্ক্ষা

আমি দেখেছি
ওই দেয়ালের আড়ালের উনুনে জ্বলতে থাকা গৃহপালিত নারী
সামাজিক নিয়ম, প্রথা, ভয়, লজ্জায় হিংস্র-অমানুষ এক কাপুরুষকে দেবতুল্য ভেবে
একটিবারও বলেনি "আমায় বাঁচাও এসে"
তার কান্না শুধু শুনেছে সযত্নে রাখা বালিশ আর জানালার লৌহ শিক

আমি দেখেছি
ভ্রান্ত বিশ্বাসে মাতাল কাউকে উপদেবতা ভেবে রক্তাক্ত রাজপথ
গণতন্ত্রের নামে পরিবারতন্ত্র কিভাবে রাষ্ট্র-যন্ত্র নষ্ট করে দেয়
বাক-স্বাধীনতার জন্য আজ যাদের স্বীয় স্বরনালী ভেঙ্গে যায়
তারাই সময়ের ব্যবধানে বাহুবলে এসে চেপে ধরে তোমার আমার মুখ
আজ যারা তোমার আমার অধিকারের জন্য প্যান্ডেল টানিয়ে অনশন করে
তারাই একদিন তোমাকে-আমাকে নিয়ে যাবে অনাহারী রাতে

আমি দেখেছি-
তুচ্ছ কারণে পিচাশের হাতে চৌদ্দ খণ্ডিত লাশ হওয়া যুবকের চোখে ভয়;
হিংস্র বন্য কুকুরের পালের মত উন্মাদ জনতার ঔদ্ধত্যয় থেঁতলে যাওয়া বালুময় লাশ;
জীবন্ত বলি হওয়া সেই নিষ্পাপ ধর্ষিত তরুণী বেচে থাকার মানে খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত;
রক্ষণশীল ভণ্ডরা স্বর্গ-নরকের ঠিকাদারি নেবার ভান ধরে ধর্মের নামে দাসত্বের শেকলে বাধবার প্রচেষ্টায়
উদারনৈতিক-বাদীরা ধর্ম নিরপেক্ষতার নামে আজ মূল্যবোধ ডুবিয়ে মারছে মদের গ্লাসে
কথিত কৃতবিদ্য সুশীলেরা পশ্চিম বিশ্ব হতে পৃষ্ঠা ছিঁড়ে এনে শেখাচ্ছে শেখানো বুলি 

আমি দেখেছি
মনুষ্যত্বের অবক্ষয়, রগচটা বাঙালির ঔদ্ধত্য-পনা, এই মানচিত্র জুড়ে অসংখ্য হতাশ আত্মা,
এই সমাজের অবাক সামাজিকতায় ঝরে যাওয়া অসংখ্য অশ্রু
আমি দেখেছি যা আমি দেখতে চাইনি আজ; দেখতে চাইনি গতকাল
...তবুও আমাকে দেখতে হচ্ছে!  

(অসমাপ্ত)

সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০১১

ডাস্টবিনে থাকে ছুটুলুকেরা

অত্র এলাকায় একটা নেড়ি কুত্তা ছিল
ভদ্র-সভ্য বড়লুকের কুত্তারা তারে
উচা দেয়ালের প্রাসাদের ভিতর দিয়া গাইলাইতো
তয় মাংসের দুকানের মিডেল ক্লাস কুত্তারা
তারে মাঝে-মাঝে খাউন দিত
মাগার জম্মের পর হইতে ময়লার ডাস্টবিনে যোগাইছে তার ডিনার
ঐখানে আধা ল্যাংটা বস্তির পুলাপান তারে লৌড়াইতো
তয় হুদাই খেলুনের জন্য, পিডানুর জইন্য না
ডাস্টবিনের খাউন নেড়ি কুত্তার কখনই ভালু লাগত না
তাই একদিন জিদ্দের চুড়ে দ্যাশ ছাড়িবার জইন্য সে তত্পর হইল
ইদিক-সিদিক ঘুইরা-ঘাইরা ইস্টুডেন্ট ভিসা লইয়া বৈদেশ গেল
কিন্তু বৈদেশেও সে নেড়ি কুত্তা
ইখানে-সিখানে এখনও সে ভাতের গরম মাড়ের ছিডা খায়
তয় এক্ষুন আর সে গাইলায় না; কয়, "বৈদেশই ভালু"
অতপর একদিন বৈদেশ হইতে নেড়ি কুত্তায় ঘুরতে ডাস্টবিনে আইল
কিন্তু এখন এই ডাস্টবিনে সে নেড়ি কুত্তা না; তিনি "জনাব কুকুর";
কেউ কিছু জিগাইলেই ঘেউ দিয়া কয় "ডাস্টবিনে ছুটুলুকেরা থাকে"
আমরা আধা ল্যাংটা বস্তির পুলাপান বলি
"মাকানচুয়ার পুলা জন্মভূমিরে এত্ত সহজে ভুইলা গেলি???"

সাপের গ্রামে একদিন যেতে হবে

সাপের গ্রামে একদিন যেতে হবে
পুরানো খোলসটা এখনো বদলায়নি
যদিও প্রিয় হরিণী জানবে না আমি সাপের গ্রামে
জানবে না স্বপ্নবিলাসী বন্ধী ময়না
তবুও সাপের গ্রামে একদিন যেতে হবে
মদের নেশায় চুর হওয়া সাপুড়ে
জানবে না কেন বীণ শুনে কেন
আসেনি ছুটে গ্রাম ছেড়ে একটাও সাপ
পোড়া মাটির গর্ত খুঁড়লে দেখা যাবে
ইঁদুরের সমাবেশ এই রাত্রি জুড়ে
বেজিদের সময় থাকবে না
সাপের সাথে লড়াই করবার
সাপের গ্রামে একদিন যেতে হবে
যেতে হবে এই কাদামাটির পরের পোড়া জমিনে
যেখানে স্বপ্নবিলাসী ময়না নেই
নেই আমার ছায়ায় ঘুরে বেড়ানো হরিণী
যেখানে নাগিনীর ছোবল বিষ ঢেলে দেবে না
ঢেলে দেবে প্রতিটি রন্ধ্র উপ-রন্ধ্রে নেশাময় প্রশান্তি!

জঙ্গলে যামুগা

বেহুদাই চিল্লায় আবুদেরা
বেবধেরা চিল্লা-ফাল্লির মইধ্যে নাই
শুনছি সন্যাসীরা জঙ্গলে যাইত
মঙ্গল সাধনা করতে
উদাম হৈয়া কে কুন মঙ্গল ঘটাইছে
ইডা আমি হয়ত বুইঝপো না;- দরকার নাই
তয় আমিও জঙ্গলে যাইতে চাই
দুনিয়ার যত ছাই ভাল্লাগে না
প্রতিদিনের যাবতীয় বাল-ছালে গা খাউজায়
আর ভদ্রতা, বিনম্রতা, প্রেত্তহ বাঁশ খাউয়া
জীবন নামের কুত্তার লৌড় খাউয়া
স্টেটাস রক্ষায় বাল ছিড়া আঁটি বাঁন্ধা
এইসব বাল-ছাল আলুছানা ভাল্লাগে না
আমি আবুদ নই; পুরাই বেবুধ
তাই চুপচাপ একদিন জঙ্গলে যামুগা
তয় মঙ্গল সাধিতে নয়;
শুধু এই বেঞ্চুদ জিন্গী হইতে অবসর নিতে!!!

রবিবার, ১৭ জুলাই, ২০১১

ইলেকট্রিক সভ্যতায় অবাক সহবাস

এই পোস্ট মডার্ন যুগে
ইলেকট্রিক সভ্যতায় কি
ভালবাসা বায়নারী ডিজিট?
"তোমাকে ভালবাসি"-এটা
বলতে কি সি-প্লাস-প্লাস ভাষা জানা লাগবে?
চলতি পথে তোমাকে দেখে ভালোলাগা কি হবে না?
নাকি এখন সামাজিক ওয়েবসাইটে
দিতে হবে বন্ধুত্বের আবেদন?

তোমার ইতিবিত্তান্ত তো জানা হবে
কিন্তু তোমার জীবনের মানে বুঝব কি?
বাংলিশ ভাষায় যদি বল
"এই সব ভালো লাগছে" অথবা
"ভালো লাগছে তোমাকে"
তবে কি সত্যিই বোঝা যাবে এর মানে?
তুমি যদি অভিমান কর তবে আমি কি বুঝব?
"ইমো" দিয়ে কি আবেগ বোঝানো সম্ভব?  
হাসি যদি লিখে প্রকাশ করতে হয়
তবে সেই হাসি কি নিরর্থক নয়?

আধুনিক প্রযুক্তি মুক্তি দিয়েছে
শিরি-ফরহাদের ভালবাসা হতে
এখন মুঠোফোনে চাইলেই তোমার কণ্ঠ শোনা যায়
রংচটা মানিব্যাগে প্রেমিক রাখে না প্রেমিকার ছবি
প্রেমিকার চুড়ির বাক্সের নিচে থাকে না প্রেমিকের ছবি
তবে এতে ভালবাসার দূরত্ব কি বেড়েছে নাকি কমেছে
মাপার সময় নেই কারো
এখন সবাই সামাজিক ওয়েবসাইটে মন্তব্য করায় ব্যস্ত

তবে আমি জানি,
চোখে চোখ না রাখলে- তোমার সুগন্ধে বিভোর না হলে-
- তোমার অকারণ হাসি না শুনলে-
- তোমার নীরবতা অনুভব না করলে
ভালবাসার গভীরতা  বোঝা যায় না
মুঠোফোন, এস.এম.এস, ইন্টারনেট এসব...
কাছে পাবার ব্যাকুলতাকে কমিয়েছে কি?
- জানা নেই আমার
আমি শুধু জানি ডিজিটাল প্রযুক্তি তোমাকে কাছে আনে
তোমার আমার মাঝে শুধুই এক অদ্ভুত দূরত্ব তৈরির জন্য!