জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

সোমবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১০

কৃত্রিম

সত্য কাটছি মিথ্যা দিয়ে
মিথ্যা কাটছি সত্য দিয়ে
অথচ রক্ত ঝরছে আমার
অন্ধ চোখে স্বপ্ন দেখছি- জেগে জেগে
মাঝে মাঝে আবার স্বপ্নই উকি দিচ্ছে আমার অঞ্জলিতে
শুধু কুয়াশার ঘোর কাটলে বুঝি যাই আমি দুঃস্বপ্নর বিছানায়

এই অন্ধকার মঞ্চে
শিকারি স্পট লাইট বারবার এসে ঝাপটে ধরে
অভিনয় করাটা একান্তই জরুরি
অবয় ঢাকতে হচ্ছে মিথ্যে মুখোশে
অকারণ হেসে খুন হওয়া,
স্বাভাবিক কৌতুক
এইসব ঢেকে দিচ্ছে অন্তরের ভেতরের মেঘগর্জন
হাসতে হাসতে চোখ ছল ছল
আসলেই কি তাই?
নাকি প্রবল বিদ্রোহে ফেটে পড়া অশ্রু ঢাকছি  
সস্তা রঙিন কাগুজে-হাসির মোড়কে!

 (November 29, 2010)

শনিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১০

নিমন্ত্রিত মেঘ-বন্দি অপ্সরী

সে আসবে না জানি তবুও
আমি তাকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছি
আমার গন্তব্য হীন অগোছালো যাত্রায় সহভ্রমনকারী হবার
এক ব্যাগ অবসর নিয়ে বেরিয়ে পড়ে
যথাক্রমে পথ, সৈকত, পাহাড়, সূর্যাস্ত ও নির্জন দ্বীপে নক্ষত্র দেখার

সে আসবে না জানি
ঝিনুকে যদি রক্তাক্ত হয় সেই ভয়ে সে মুক্ত কুড়ায় না
জল যদি তার কাজল ধুয়ে ফেলে তাই সে বর্ষায় ভেজে না
শুনেছি চরণে যদি আঘাত লাগে তাই সে নগ্ন পায়ে শিশির ভেজা ঘাসে কখনো  হাটেনি
বজ্রপাতের শঙ্কায় সে নাকি কখনো বৈশাখের ঝরে আম কুড়োয় নি
সে থাকে তার চারপাশে দুর্ভেদ্য প্রাচীর তুলে

জানি সে আসবে না তবুও
আমি তাকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছি
বন্ধ দরজায় তার দুঃখবিলাস
হয়ত সে আসতে চাইছে কিন্তু আসতে পারছে না
অথবা হয়ত ভবঘুরেদের নিমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করা মেঘ-বন্দি মেয়েদের নিয়ম!

(November 27, 2010)

বৃহস্পতিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১০

অভিশপ্ত স্বাভাবিকতা

আমার মত কিছু অভিশপ্ত সত্তা
কখনো পারে না ছুঁয়ে যেতে হৃদ-ছায়া
-নিয়ম নেই
আমার আকাশকে চিনতে হয়;
দু'দণ্ড সময় দিতে হয়
সূর্যের আলো ঝরে আকাশের রক্তক্ষরণে;
-এসব আমাকে বুঝতে হয়
তবে তোমার বোঝার কোনই প্রয়োজন নেই
-সারা বেলা তোমার সুর্যবিলাস

আমার হারিয়ে যেতে বারণ- তাই হারাতে পারছি না
হারালে মহাকাশের কৃত্রিম উপগ্রহরা ঠিকই আমায় খুঁজে নেবে
আমার অবুঝ সব ভুলগুলো শবাধার হতে তুলে এনে
প্রতিটি ভুলের জন্য শাসন করবে- তখন আমি নতনেত্রে নীরব

জানি কোন প্রয়োজন নেই
তবুও নিমন্ত্রণ জানিয়ে রাখলাম
তুমি আসবে এবং যাবে- তোমার খেয়াল-খুশি মত
আমি থাকব আমার ঠিকানায়- আমাকে থাকতেই হবে
অথবা তোমার আহবানে আমি তেপান্তর- কিংবা আরও কিছুদূর

বলা হয়নি কিছুই স্পষ্টতায়- তবে আগামীতেও হবে না
বলার প্রয়োজনও ছিল না এবং বলেও কিছু হত না
সেদিন এবং অনেক আগেই তুমি বুঝেছিলে
জানি সঙ্গত কারণেই অসঙ্গত আমাকে এড়িয়ে গিয়েছ
ভেবো না আমি এড়াতে চাইনি
স্বাভাবিকতার দোহাই দিয়ে গড়তে চেয়েছিলাম ঘোলাটে কাঁচ
তবে পারিনি

তুমি থাকতে চাও স্পর্শের বাইরে- এবং থাকছ
জানি আমি ভেঙ্গে যাই বারবার-
তবুও তোমায় বাধা দেবার স্পর্ধা আমার নেই

দেয়ালের আড়ালে ছায়ায় শ্রাবণের পবন আয়োজন চলবে অহর্নিশ
কিন্তু সব লুকিয়ে রাখতে হবে- স্বাভাবিকতা আমার জন্য বাধ্যতামূলক
একটিবারও কেউ জানবে না- ওপারে তাণ্ডবে-তাণ্ডবে সব ধ্বংশস্তুপ
তারপর; চৈত্রের দুপরের মত সব হতে হবে স্বাভাবিক- কেমন জানি স্বাভাবিক! 

(November 25, 2010)

বুধবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১০

অথবা ছল

শুয়ে আছি ঘুমের অভিনয়
ঘুমিয়ে আছি স্বপ্নের অভিনয়
ইচ্ছে মত ইচ্ছেগুলো বাক্সে ভরছি
ইচ্ছেগুলো ধূম্র ডানায়
ইচ্ছেগুলো উড়ে যায়
এলোমেলো সবকিছু
এলোমেলো ধুলায় ধুলায়
এলোমেলো চুল এলোমেলো বিছানায়
এলোমেলো ঘরে এলোমেলো আমি
ছন্নছাড়া ঘড়ির কাটা
ছন্নছাড়া ভবঘুরে পথ ছন্নছাড়া জীবন
ইচ্ছে মত অভিনয় করছি- সব পরিপাটি
সবই ভাললাগছে
-অথবা ভাললাগার অভিনয় করছি

(November 24, 2010)

যাবতীয় অনুকাব্য- ২

১.
নিশিতে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছি
বালিকা সুলভ এক তরুণী বিষয়ক স্বপ্ন
অনেক চেষ্টা করেও
তার কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম না
তারপর জোনাক জ্বালিয়ে
ভিজলাম মিথিলা বর্ষায়-
সারারাত একা একা!

২.
আমি মাঝে মাঝে ভুল স্বপ্ন দেখি
ভালবাসার মতন মরীচিকা
আমি মাঝে মাঝে যাই মেঘের দেশে
আমার উড়ে যাওয়াটাই বিভ্রন্ত্রতা
আমি মাঝে মাঝে ভালোবেসে ফেলি
স্পর্শের বাইরের ভালবাসা

৩.
ভাবছি তুমি আমি
আসলে তা না
ভাবছি শুধুই আমি
তুমি কিন্তু ভাবছ না
স্বপ্ন শুধুই আমার
ঘুম কিন্তু তোমারটা

(November 24, 2010)

অতন্দ্রিলা

ঘুমাওনি জানি-
মুঠোফোন বালিশের পাশে রেখে দৃষ্টি সিলিং-এ
গোটা কয়েক এসএমএস কড়া নাড়ে সজোরে
এসব তোমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে না
তুমি ও তোমার ভাবনা হেঁটে চলেছ পাশাপাশি
অতন্দ্রিলা তুমি জেগে আছ জানি-
শুকতারা স্পর্শ করে আসা নিভু আলো এসে
ছুঁয়ে যায় তোমার বিছানার শেষ প্রান্ত
প্রিয় ভায়োলিন ঘরের এক কোণে বাক্সে বন্দি
ধুলো তার সাথে মাখামাখি করে সুর তুলবে বলে
জেগে আছ জানি-
তোমার ভাবনা চলে ঘড়ির কাঁটার উল্টো দিকে
শুয়ে শুয়ে তোমার ভালো লাগে গুনগুন গান
তোমার এলোমেলো ভাবনা
তোমার ইচ্ছের সুতোয় বোনা স্বপ্ন
-অথবা হয়ত আমি

অতন্দ্রিলা ঘুমাওনি জানি-
তোমার জগতের দ্বারপ্রান্তে
নির্ঘুম চিলেকোঠার জানালার পাশে
জেগে আছি আমি আর একটা জ্বলন্ত সিগারেট
দ্বিধা হয় তবু চেপে ধরে আছি মুঠোফোনটা
তোমার কণ্ঠস্বর শুনব বলে!

(November 23, 2010)

আকর্ষণ রূপান্তর

বুঝেই উঠতে পারিনি
কখন যে আকর্ষণ রূপ নিলো ভালোলাগায়
কখন যে ভালোলাগা থেকে ভালবেসে ফেলেছি
কখন যে রাত্রিযাপনের কামনা রূপ নিয়েছে জীবনযাপনের
এখন শুধুই বিগত সময়ের স্তূপে ভালবাসা শুরুর মুহূর্ত খুঁজছি
-সযত্নে তুলে রাখব বলে
পড়ন্ত সূর্যালোক তোমার কাঁধ বেয়ে বেয়ে তোমার বক্ষে
আর তার সাথে মেশে আমার বিমোহিত আড়চোখা দৃষ্টি
আমার মস্তিষ্ক জুড়ে ইতস্ততা- ভয়
যদি তুমি বুঝে ফেল আমার দৃষ্টির গন্তব্য,
যদি ভাব আমার ভাবনা কুৎসিত,
যদি আমায় মন্দ ভেবে দুরে চলে যাও চিরতরে,
তবু ঘোরলাগা এ দৃষ্টি ফেরাতে পারছি না
মাদকের চেয়েও প্রবল তোমার নেশা-
তোমাকে পাবার নেশা- একান্তই ঘনিষ্ঠ রূপে
যে অংশটা উন্মুক্ত রেখেছ তা আমাকে আহবান জানাচ্ছে
ইচ্ছে জাগাচ্ছে তোমায় হাত ধরে খুব কাছে টেনে নেবার
এরপর যেন নয়ন বুজে দুজন-দুজনাকে দেখছি
আমার তৃষ্ণার্ত ঠোট তোমার চুম্বন পায়নি
অথচ আছে তোমার লালাভ ঠোট স্পর্শ করে
আমার আঙ্গুলের ছোঁয়া একটু একটু করে ছুঁয়ে যায়
তোমার উরু হতে নিতম্ব এবং...
তারপর এসে থামে তোমার নগ্ন কটিকায়
তখন আমি টেনে নেই তোমায় দেহের আরও কাছে
উথলে ওঠা প্রেমে তুমিও জড়িয়ে আমায়
-খেলে যায় তোমার আমার অনভ্যস্ত তৃষ্ণার্ত ঠোট!

(November 23, 2010)

মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১০

যাবতীয় অনুকাব্য- ১

১.
হি হি হা হা
অনেকটাই অযথা
চরম আড্ডা; গরম চা
এবং অনেকে-কিন্তু শুধু তুমি আমি
ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে
এইসব ভালোলাগছে
কিছু বুঝে ওঠার আগেই এভাবেই প্রেম এসে যাচ্ছে


২.
কোন উন্মাদনা নেই
অস্থির নিসঙ্গতা চারিদিক
অশ্রু মিশে যাচ্ছে নোনা জলে
সাগরের কাছে আমার নালিশ
তুমি আসনি বলে

৩.
রহস্যময় ধুম্র পারিনি বুঝতে
অজান্তেই ডুবেছি আপ্তগরুজে
আজ অসীম সমুদ্রতীরে
চাই তাপিত হিয়া জুড়াতে
হে সমুদ্র আমায় কর অপদুদ্ধার



৪.
হাতে রক্তিম গোলাপের শুন্যতা নেই
সাদা কাগজে লেখা দু'লাইন কবিতা শুধু এগোচ্ছি
একটা-দুটা এলোমেলো পায়ে কম্পগাত্র
আর চরুই পাখির মত দুরুদুরু বুক নিয়ে
না পেয়েই হারাবার আতঙ্কে মস্তিস্ক ঘোলাটে
তাই বিভ্রান্ত আমি বিভ্রন্ততা নিয়ে
খুব কাছেএসে থমকে যাই তার কক্ষপথে

সোমবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১০

দ্বিপাক্ষীয় দেহবন্টন চুক্তি জনিত বিশেষ দিবস

আজ একটি বিশেষ শুভ দিন-
গৃহ হতে শুরু করে যাবতীয় বন্ধুমহল অনবগত
আজ দ্বিপাক্ষীয় দেহবন্টন চুক্তিনামায় সাক্ষর করিতে যাচ্ছি
শাহবাগে ফুলের তোড়ার বেজায় দাম
তাই একখানা রক্তিম গোলাপই সম্বল
তেল দিলে নাকি খ্যাত খ্যাত লাগে
তাই মাথায় দিয়েছি ধার করা বিদেশী জেল
ঘোচাতে হবে বাসে ঝুলে আর গরমে ধাক্কাধাক্কির ফসল দুর্গন্ধ
আজ আমাকে চৌকস দেখাতে হবে
সেলিম ড্রাই ক্লিনার্স থেকে ধার করেছি দামী একখানা পাঞ্জাবি
পায়ে সদ্য কালী করানো জুতো
আজ হতে শুরু করতে যাচ্ছি চুক্তিসাক্ষরিত জীবন
এখন থেকে যথাক্রমে বসবাস, খাওয়া ও ঘুম হবে একসাথে


(November 15, 2010)

শনিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১০

ভৌগলিক নির্বাসন

বিক্ষিপ্ত খেয়াল ছোটে দিশেহারা ধুম্রশালকার মত
খানিকটা পর ভ্রান্ততা কাটে
সময় ও ভুখন্ডের দূরত্বে দুজনেই ভিন্ন মেরু
স্পর্শহীনতার অসহায়ত্ব নিয়ে জানালা গলে দৃষ্টি আকাশে
সেখানে জোড়ায় জোড়ায় অপ্রাপ্তবয়স্ক নক্ষত্রেরা অভিসারে
মেঘেদের শ্বাসন উপেক্ষা করে

শুধু অস্থির মহাকালের অপারগতায়
বোবা অন্ধকার কোনে তারা শীতের মত জড়ো-সরো
অনাগত সময়ের অজানা শংকায়
দেয়াল ঘড়ির ঘন্টার শব্দে ভাঙ্গে লীন জড়তা
আবার তারা ফিরে যায় নীলে
এভাবেই ভোর অবধি তাদের দ্বহন পরস্পরের শুন্যতায়

সকালের সূর্যালোক আসে জলের মত গড়িয়ে
সে আলো তাদের শরীর ছুয়ে যায়
জন্ম দেয় তাদের ছায়া শরীরের
তারপর তাদের সবই স্বাভাবিক—
কিংম্বা স্বাভাবিকের অভিনয়
সময় ও ভৌগলিক দূরত্বের অনল বুকে নিয়ে  

—— (November 13, 2010)

বুধবার, ১০ নভেম্বর, ২০১০

প্রিয় হ্যান্ডগানের ব্যারলে তাকিয়ে ভাবছি

আজকে মনে হচ্ছে শুন্যতার শতবর্ষ পূর্তি
আজকে মনে হচ্ছে কোনই অতীত ছিল না
আজকে কিছুই মনে পরছে না
অথবা হয়ত আজ সবকিছু একবারে মনে পড়ে গিয়ে মস্তিস্কে যানজট।

আজ মনে হচ্ছে গতকালও সারাবেলা ছিল মস্তিস্কে শুন্যতা;
আজ নিজেকে মনে হচ্ছে নিন্মমাধ্যমিকের কোন বোকা-গাধা ছাত্র
অক্ষর গুলো সব গিলে খেয়ে চোখের ফ্যাল-ফ্যাল দৃষ্টি।
আজ মনে হচ্ছে বার্ষিকীতে ফেল করে দিশেহারা—
রিপোট কার্ডটা হাতে নিয়ে বসে আছি শুন্য বেঞ্চিতে।

আজ মনে হচ্ছে জীবনের সব হেরে যাওয়া ঘটনা এই মুহুর্তে একসাথে ঘটছে
পুনরায় সেই ভয়ঙ্কর সব ব্যর্থতার লজ্জা, ঘৃনা, ক্ষোভ জন্ম নিচ্ছে নতুন করে,
গলায় কান্না চেপে রেখে রেখে ভাংছে কন্ঠস্বর,
মাদকাসক্তের রক্তিম চক্ষুর দেয়াল জুড়ে জমছে নোনা জল—
অথচ খানিকটা পরই আবার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামির চোখের দুঃক্ষময় নির্লিপ্ততা।

আজ অনুভূতিহীন বলে, অনুভুতির খোঁজে বন্ধ সব দুয়ারে কড়া নাড়ছি,
আজ কফিনের অসস্থিকর শ্বাসরুদ্ধতা আমাকে বাঁচিয়ে রাখছে;
আজ বিধাতার স্বর্গদূতেরা আমার কাছ হতে দুরে সরে থাকছে,
শুধু জীবন্ত চিতার যন্ত্রণা নিয়ে আসছে শয়তানের তামাটে সৈনিকেরা।

দৃশ্যমান সবুজে নীলাভ ধমনী ধরছে ছাইয়ের কালচে বর্ণ
নিস্তেজ হয়ে আসা আঙ্গুলগুলো মাথা তুলে দাড়িয়ে দিচ্ছে না
নিভিয়ে— বিছানার পাশে জ্বলে থাকা একমাত্র টেবিলল্যাম্প;
আয়নার প্রতিবিম্বে দেখা স্বীয় কুত্সীত মুখচ্ছবি শুধুই বাড়াচ্ছে আক্ষেপ।

কি প্রয়োজন ছিল মৃত্যুর এত কাছে থেকে ফেরাবার জন্য বিধাতার কাছে মিনতির?
কি প্রয়োজন ছিল সেদিন প্রাণ ভিক্ষে চাওয়ার?
সেদিন কি মৃত্যুদেব সমন জারি আসেন নি, নিতে আজকের এই অতি ঘৃণিত জীবনকে?
সেদিন কি হতে পারত না এই অপয়া অজাজিত স্বত্তার শেষ?
আক্ষেপ হয় কেন চাইনি ছুয়ে যাক ও'পারের আলো,
কেন আঁকড়ে ধরেছিলাম এই জগতকে ভয়ার্ত শিশুর মত
কেন ভেবেছিলাম আমার পৃথিবীতে মাতাল সমুদ্রের ঝড় কাটতে পারে?
আজ স্মিথ আন্ড ওয়েসনের ব্যারলে তাকিয়ে স্থবির হয়ে থাকার তো কথা ছিল না—
কথা ছিল না পয়েন্ট ৩৫৭ ম্যাগনাম মুখোমুখি দাড়াবে রক্তের নেশায়!

কথা ছিল আমার অন্ধকার সুরঙ্গের শেষে থাকবে আলোর মিছিল!

আজ মস্তিস্কের ক্ষরিত রক্ত বেয়ে ঝরছে পোতাস্রয়ের উল্লাসে,
ঝি ঝি ধরা শব্দে থমকে আছে পুরো নগর।
আজ মনে হচ্ছে গত সময়ের মতই এখনও হাত বাড়ালে কেউ নেই—
আজ স্বয়ং বিধাতাই আমাকে ভালবাসতে চেয়েও ভালবাসতে পারছেন না!

—রাইয়ান ওয়াহিদ
 (November 8, 2010)

পাইলাম না খুজে

পাইলাম না খুজে
গগনে দেখিলাম
মর্তে দেখিলাম
দেখিলাম মেঘ উল্টে-পাল্টে
সাগরে দেখিলাম
নদীতে দেখিলাম
দেখিলাম পাহাড়ের নিচে;
রেডিওতে দিলাম
টিভিতে দিলাম
দিলাম অনলাইন সংবাদপত্রে হারানোর বিজ্ঞাপন
তবুও পাইলাম না,
আমি হারাধন—
হারাইয়াছি মোর রতন।
আমি শুধু একাই খুজি নাই
খুজেছে ইতিপূর্বে অনেকজন
খুজেছে ভ্যানগথ
খুজেছে বাউল
খুজেছে জিম মরিসন।
আনাচে খুজিলাম
কানাচে খুজিলাম
খুজিলাম গুগলে সার্চ দিয়ে
তবুও এখনো পাইনি কিছুই
আছি বসে অদৃশ্য অশ্ব ডিম্ব নিয়ে
জিডি করিলাম
তল্লাশি চালাইলাম
দিলাম তদন্ত কমিটি বসিয়ে
তবুও এখনো খোজ, দা সার্চে আছি
আস্ত ভোদাই বনে!

---রাইয়ান ওয়াহিদ

(November 8, 2010

বৃহস্পতিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১০

প্রাচীন অথবা পৌরাণিকীর রূপে তুমি

এই সময়; এই মুহূর্ত ছেড়ে আমি কোথাও যেতে চাই না—
এই ঘাসের চাঁদরে অথবা জানালার পাশে এই বিছানা
তোমাকে আমাকে আবার নতুন করে ভালবাসতে শেখায়;
এখানে; এই মুহুর্তে দু'জনে আমরা বৈশাখের ঝড়,
অথবা প্রিয় কোন চলচিত্রের রোমাঞ্চকর দৃশ্য।

এই সময়; এই মুহুর্তে তুমি গ্রীক পৌরাণিকীর দেবী অ্যাফরোডাইটি—
সাগরের ঢেউয়ে ভেসে আঁছড়ে পড় আমার সৈকতে;
সৈন্দর্য, প্রেম, আকর্ষণ, কামনা সবই তোমায় ঘিরে।

এই সময়; এই মুহুর্তে কোন এক ঘুমহীন রাতে—
তুমি এসে দাড়াও মুক্ত স্বাধীন;
কামনার ছলে আঙ্গুলে পেচাঁচ্ছ চুল
সূতোটাও পর্যন্ত নেই,
তোমার ত্বক বেয়ে ঝরে অঙ্গীকার।

এই সময়; এই মুহুর্তে—
তুমি বয়ে নিয়ে আসো ক্লীয়পেট্রার সৈন্দর্যর গভীরতা—
প্রাচীন হতে প্রাচীনতর সময়ের কাছ থেকে।
আর আমি যেন তোমার রূপে মত্ত কোন রোমান শাসক;
সাম্রাজ্য ভুলে এই বিছানায়— তোমার চোখে আমার চোখ!

(November 4th, 2010)

বেচে থাকার জন্য

বিক্ষিপ্ত স্রোত এসে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে
মাঝ সমুদ্রে নোনা জলেতাই ভাসছি
বৃত্ত সীমানা গড়ে তুলে চারিপাশে
ক্ষুদার্থ হাঙ্গরের উল্লাস
তবুও ছোট ছোট স্বপ্নরা এসে সারা দেয়
সমর্পনের তীব্রতা চিড়ে
বাঁচবার জন্য
বেচে থাকার জন্য....

(November 2, 2010)


হতাশ

হৃদয় নিংড়ানো কালী দিয়ে লেখা কবিতা কি অর্থহীন নয়?
সময়ের নিষ্ঠুরতা সইতে না পেরে
জীবনের অনিকেত্প্রান্তরে গিয়ে ফিরেই যদি আসি
তবে কি যাওয়াটাই অঝথা ছিল না?
হয়তঃ ছিল—
তবুও পথভ্রস্ঠের মত যাই আমি বারবার—
জং ধরা লোহার টুকরোর মত
ব্যর্থতা ধরা অস্তিত্বকে ছুড়ে ফেলে দিতে।
কিন্তু সেখানেও আমি ব্যার্থ!
প্রবল আতঙ্কে, কাপুরুষতার অশুভ ছায়ার আলিঙ্গনে
মাদকাসক্তের হতাশা ছরিয়ে যায় রন্দ্রে রন্দ্রে।
আমি যেন সূর্যের হেয়ালি প্রখরতায় শুষ্ক হয়ে
এই অনিকেত্প্রান্তরে অবহেলায় পড়ে থাকা কিছু উদ্ভিদ।
এক ফোটা জলের আশায়
আমাদের আর্তনাদ মেঘেদের কাছে
দৃষ্টি বোকা কাকের মত—
কিন্তু বিধাতার মতই উপরে মেঘপাল দেখেও দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়!

(October 25, 2010)

অবাক অবস্থান

না, এখন আমি আর ভালোবাসি না!
আমি ভুলেছি প্রেম, অভিমান, আকর্ষণ
আমার কাছে এ সবই শুধু কিছু বর্ণের অর্থহীন সহবাস।
আমি চন্দ্রাহত নই—
তবুও এখন আর পূর্নিমা দেখি না।
শীতল নিরবতার ডাকে আমি হাটি সারা রাত,
আমি একবারের জন্যও তারাদের মিছিল দেখি না।

সূর্যের তপ্ত স্বর্নিল আলো আমায় অভিশাপ দেয়
আমি তাই এই অন্ধকুঠুরিকে বানিয়েছি অভেদ্য দুর্গ,
এখানে আলোদের আসতে মানা;
তবুও এখানে কিছু আলো আসে— অন্ধকার হয়ে।
এই অন্ধকুঠুরীর দরজায় বাতাস কড়া নারে
আমি আরো শক্ত করে সিট এটে ঘরের কোনে।
এখন আমি আর ভাবনায় হারাই না
আমার চিন্তায় শুধু ধুসর আর ঝি ঝি ধরা শব্দ;
আমি এখন আর আনন্দে হই না মাতহারা
তবে আমি কষ্টে আছি— এমনও কিন্তু বলছি না!

(October 23, 2010)

লাগামহীন ইচ্ছে

মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে—
পৃথিবীর সবথেকে জনমানবহীন রাস্তা ধরে শত মাইল বেগে ছুটে চলি
ছুটতে ছুটতে চলে যাই সূর্যের আস্থানায়,
শুধু বালুকণা আর বাতাসকে সঙ্গী করে।

মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে—
মেঘ ছুই ছুই পর্বতের চুড়ায় বসে দৃষ্টি বহুদূর
শুধু জলপ্রপাতের শব্দকে সঙ্গী করে।

মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে—
এই সমুদ্রের ঢেউ এসে আমায় নিয়ে যাক জলরাশির মাঝে
অথবা নিঃশব্দ অন্ধকার তলদেশে।

মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে—
এলোমেলো এই বিছানাটাই যেন আমার কফিন,
জেগে ওঠার অনিচ্ছা আর বদ্ধ এই ঘরে কর্পুরের কড়া গন্ধ
নিয়ে যাক চির অজানার আর একটু কাছে।

মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে—
হতাম যদি চিন্তা-চেতনা শূন্য,
আমি শুধু দর্শক এই সময়ের,—
সামনে চলছে জীবন,রুপালি পর্দায়!

(October 22, 2010)

টোঙ্গের দোকানের পরিচিত সেই দৃশ্য

আমার প্রিয় নগরীর রাস্তার পাশে
তারাবিহীন রেস্তোরায় ঘুনে ধরা অবহেলিত কাঠের বেঞ্চ।
এই নগরীর মতই —
বাঁসি কিছু রুটি আর কালচে বর্ণের কিছু কলা সাজানো,
সাথে অসহায় একদল বিস্কুট অথবা কেক কাঁচের জারে বন্ধী।
এখানে পাঁচতারা রেস্তোরার অথবা ফাস্টফুডের মনোরম পরিবেশ নেই,
আছে শুধু সস্তা অমৃত চা'এর সুবাস, রাস্তার ধুলো, আর যানবাহনের চেচামেচি!
আলো শেষে ঝলমলে অথবা রুচিশীল নিভু নিভু বাতি নেই
এখনে শুধু কেরোসিনের কুপি জ্বলে সুর্য হয়ে।
এখানে কোন চৌকস খাদ্য পরিবেশক নেই
আছে শুধু বখাটে মাছিদের একটি দল!
যখন নগরী জুড়ে সব তৃষ্ণার্থ 
অথচ তখন এখানের ভাঙ্গা পেয়ালায় মেলে এক কাপ তৃপ্তি!

এখানে এককালে ছিল আমাদের তুমুল আড্ডা
ক্লাস ফাকি দেয়া বাউন্ডুলে সময়,
আমাদের ভরদুপুর অথবা বিকেল গড়িয়ে সন্ধা।
এখনে চা'এর চুমুকে পান করেছি অজস্র স্বপ্ন
আর সিগারেটের ধোয়াতে সুখ।
এখনে ফিরে আসার জন্য মরুভূমির তৃষ্ণা
যদিও জানি শীর্ষ থেকে অতলে চলে সময় —
তবুও ইচ্ছে করে এক ঝাঁক বন্ধু আর আমি
টোঙ্গের দোকানের পরিচিত সেই দৃশ্য!



(October 6th 2010)

ক্যাকটাস দেয়ালে কারাবন্ধী

কেন ডাকিস আমায়?
জানিস না—
আমি মুক্ত আকাশের নিচে
সমুদ্র জলরাশি আর এ বিশাল ভুখন্ডে বন্ধী।

জানিস না—
আমি তোর নিমন্ত্রনে হই দিশেহারা,
ছুটে যাই নিষিদ্ধ অনিকেত্প্রান্তরে;
যেখানে একরাশ অপারগতা ক্যাকটাস দেয়াল
আমার পালানোর পথ আগলে রেখে পাহারায় থাকে।
জানিস না তুই ডাকলে
উন্মাদের মত ছুটে যাই;
কাটার আঘাতে শুধুই ফিরি বার বার রক্তাক্ত হয়ে।

জানিস না—
আমি নিয়তির শেকলে জীবনের খুটিতে বন্ধী।
কেন আমায় উড়ে আসতে বলিস?
তুই কি জানিস না—
আমি মুক্ত বিহঙ্গের ডানা দেখে ইর্ষায় জ্বলছি।

কেন আমায় ওপারের স্বপ্ন দেখাস?
জানিস না আমি সপ্নহত।
কেন আমায় কষ্ট দিস পুরনো দিনের কথা বলে?
জানিস না—
সেই সব দিন আমায় পীড়া দেয় দুস্বপ্ন হয়ে।

ডাকিস না আমায়—
পরাভূত আমি সময়ের আজ্ঞাধীন
আমি রং ঝরে যাওয়া ফিকে রক্তপদ্ন,
আমার বেড়াতে যাওয়া বারণ;
আমি জীবনের কাছে বন্ধী
এই মেঘ্পালের নিচেই আমার আমৃত্যু কারাদন্ড!

(১৭ ভাদ্র ১৪১৭ বঙ্গাব্দ)

এইসব

জীবনের অধিক আলোকিত পথগুলো অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে
ধূর্ত ঠকবাজ সেই অন্ধকারগুলো ধরা দেয় না,
তারা আলোর মুখোস পড়ে ফাঁদ পেতে রাখে
সেই ফাঁদে ধরা দেয় যতসব ভাগ্যহত।
চাপা ক্ষোভে জন্ম নেয় কিছু উদ্ভিদ,
তাদের সময়ের হিসেব রাখতে হয়।
আর সময়ের কাদামাটি—
সে ধরে রাখে যত সব পথিকের পদচ্ছবি।
মেঘ গুলো সমাবেশ করে,
গগন কাঁপানো তাদের হুঙ্কার
আজকের সিদ্ধান্ত— বৃষ্টি নামবে।
প্রবল সে বৃষ্টি—
আলোকিত বজ্র আর শীল প্রপাত।
বেপরওয়া কিছু বাতাসের দল ঝর তোলে,
মুহুর্তে ছিটকে হারিয়ে যায় উড়ন্ত ঘুড়ি
শুধু নাটাই পড়ে থাকে—
ঘুড়ির শেষ স্বৃতিচিন্ন—এক গুচ্ছ সুতোকে আঁকড়ে ধরে।

(১৫ ভাদ্র ১৪১৭ বঙ্গাব্দ)

মৃত্যু আসছে না

আলোর সাথে বিরোধ—
আমি সূর্যাহত।
জানালার পাশে রাখা আয়নায়
চাঁদের আলো দেখছে তার অন্ধকার প্রতিফলন।

রক্তচক্ষু আর ছন্দহীন রিদপিন্ড
আজ আমি আমার মুখোমুখী
আত্মহনন ব্যর্থ চেষ্টা,
তবুও রক্তাক্ত এই গলরুজ্জু ঝুলছে।

বাইরে বৈদ্দুতিক তারে রাতজাগা কাক
তাদের চিত্কারে নিরবতা ভাংছে
তা শুনে বেওয়ারিশ কুকুরদের হুঙ্কার।

জানালার সিক গলে আসা আলোয়
জন্ম নেয় হিংস্র ছায়া,
আমার ভেতরের অশরীরীর উপছ্য়া
এসে মিশে যায় আমার ছায়ায়।

কব্জির ক্ষত—
দেখায় ছিড়ে যাওয়া রক্তনালী,
এই অশুচি দেহ থেকে তারা মুক্তি চায়
মুক্তির নেশায় ফিনকি দিয়ে রক্ত ছিটকে পড়ে
জমাট বাঁধা কালচে রক্ত উপেক্ষা করে।

অজস্র রক্তখনন,
তবু অবাধ্য দেহ ঢলে পরছে না
দুয়ার খুলে নিমন্ত্রণ দিয়েছি
তবু মৃত্যু আসছে না!

(১৩ ভাদ্র ১৪১৭ বঙ্গাব্দ)

এই চাঁদরে

ভোরের প্রথম আলো পর্যন্ত
তুমি আমি চাঁদর জড়িয়ে,
অন্ধকারের চিলতে আলোয় আমাদের কথোপকথন
কিংবা একে অন্যের নিরবতা শুনছি।

কোন ঝি ঝি পোকার ডাক নেই;
শুধু তোমার আমার হৃদয়্স্পন্ধন
অন্ধকারের নিরবতা ভেঙ্গে জানিয়ে দিচ্ছে অস্তিত্ব
আর হিমাঙ্কের কাছাকাছি শীতলতা পরাজয় মানছে
তোমার আমার শরীরের উষ্ণতায়—
এই চাঁদরে।

এই চাঁদরে—
তুমি আমি একাককার
দৈহিক মানচিত্রে চুম্ভনের রঙ্গে ভালবাসা আঁকছি।
বহুকাল ধরে তুমি আমি
তবুও আজ আমরা কৌতহলী,
মৃদু আমাদের তৃপ্তির নিশ্বাস
ভালবাসার নেশাকে করছে আরো ধুম্র;
আর সেই নেশায় হারিয়ে
দেহের বাঁকে একে অন্যকে খুজছি।

তোমার বক্ষে মাথা রেখে
হৃদয়্স্পন্ধন শুনছি।
লজ্জাবতী পাতা যেমন স্পর্শে নিজেকে লুকায়,
তেমনি তুমিও কুচাগ্রে মৃদু চুম্ভনে শিহিরিত।
আমার ভবঘুরে ঠোট তোমার দেহ ঘুরে ঘুরে
এসে আশ্রয় খোঁজে তোমার ঠোটে,
তোমায় ভালোবেসে—
এই চাঁদরে।


(৭ ভাদ্র ১৪১৭ বঙ্গাব্দ)

সম্পর্কের সমীকরণ

ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে—
জীবনের সব সমীকরণে মহা জটিলতা,
প্রতিটি পদে পদে এখন হিসেব কষতে হচ্ছে।
চারিদিকে সম্পর্কের মূল্যস্ফীতি,
আর সম্পর্ক নষ্টের বিশাল মুল্যরাস।
লেন-দেন চলছে চড়া সুদে;
কোষাগারের সামনে লেগেছে জট—
অধিকোষ স্থিতি শূন্য করে
চেক ভাঙ্গিয়ে দান-প্রতিদান উসুল করছে সবাই।
কার কত অবদান,
কার সাথে কার অবদানের কত ব্যবধান,
তাই নিয়ে চলছে অসমসমিকরণ।
যোগ-বিয়োগের গভীর জটে
পাল্টে যাচ্ছে হিসেবের ধরন।
হিংস্র হয়ে উঠেছে সবাই
সস্তা ছাই-পাসের বিনিময়ে;
দ্বিগুন লাভ করবে বলে।


(২ ভাদ্র ১৪১৭ বঙ্গাব্দ)

তুমি ও বৃষ্টি

সেদিন বারান্দায় দাড়িয়ে দেখেছি—
তুমি মেঘের ডাকে ছুটে এসেছ ছাদে
বাদলের উত্তাল ঝড়ো নৃত্তে
শিহরিত তোমার হিয়া.
দূর থেকে ভেসে আসা ভিজে-বর্ষা
তোমায় আলিঙ্গন করে ভালোবেসে,
আর বর্ষা-জল যেন জলপ্রপাত
কপাল ছুয়ে—
চুমো খায় তোমার ঠোটে!

(২৬ শ্রাবণ ১৪১৭ বঙ্গাব্দ)

আমরা সবাই

দুনিয়ার সবাই প্রতিনিত বাঁশ খাচ্ছে—
প্রত্যেক দিন অসময়ের পাথরে আমাদের উষ্টা খাওয়া,
প্রতিদিন কারনে-অকারনে তোসামদী—
খাচ্ছি এবং সমান তালে দিচ্ছি।
কতিপয় বিরক্তিকর মানুষ দেখে
ঠাস করে চড় দেব বলে মনে মনে ভাবছি।
হাতটা আধা ইঞ্চি বাড়িয়েও
অথচ আবার আড়াই ইঞ্চি পিছনে নিচ্ছি।

শুধু এইখানেই শেষ নয়—
ব্যাক্কলের মত বেকায়দায় পড়ে
দাঁতগুলো ডিসপ্লেতে তুলে হাসি দিচ্ছি;
কল্লা সুদ্ধ মুন্ডটা মাটিতে পুতে দিতে ইচ্ছে করে,
তবুও কুশলদি বিনিময় করছি।

প্রতিদিনই আমাদের প্রিয় লুকুচুরি খেলা—
কতিপয় কিছু মানুষ দেখে লুকচ্ছি।
মাঝে মাঝে আমরাই সেই "কতিপয়";
কেউ কেউ আমাদের দেখে লুকোচ্ছে।
এ যেন পুনরায় নিন্ম-মাধ্যমিকে ফিরে যাওয়া—
একে অন্যের কাপড়ে দাগা-দাগির বদলে
চরিত্র-সার্টিফিকেটে কুত্সার মার্কার দিয়ে দাগাচ্ছি।
আর পিছে বসে ভত্সনা!—
সে তো বাথরুমে আনমনে গেয়ে ওঠার মত বেপার;
তাই মনের সুখে গেয়ে যাচ্ছি।

বাস্তবে সম্ভব নয়,
তাই মনে মনে সকলের গুষ্টি উদ্ধার করছি।
প্রতিদিন বেহুদা অথবা চাপে পড়ে চাঁপা মারছি—
অথচ আমরা ঢ্যারা পিটিয়ে করি সত্যের জয়গান!
দুটো নিশ্বাস পর পর আমরা মিথ্যা বলছি,
তবুও কারো মিথ্যা ধরা পড়ে গেলে প্রাণঢালা ধিক্কার দিচ্ছি।

এ সবের মানে কি?—
নিজেদের মহান জাহির করা?
নাকি অন্যের বিব্রতায় আনন্দ পাওয়া?
মিথ্যুক-সত্তুক যাই হই না কেন
আমরা নিজেদের ভাবি স্বর্গীয় দূত।
আমাদের সকলেরই তলা ফুটা—
তবুও নিজেদের গুরুত্ব বোঝাতে হবেই,
তাই আমরা অনেক ব্যাস্ত থাকি—
ব্যাস্ততার খোঁজে!

জানি পেছনে পেছনে সবাই গালি দেয়
তবুও সুযোগ পেলেই হুঙ্কার দিচ্ছি,
আবার কোথাও কোথাও ঝারিও খাচ্ছি।
জানি না এসবের কি প্রয়োজন—
হয়ত নিশ্চই আছে!
হয়ত আমরা সবাই কুকুরের মত,
হুঙ্কার দিয়ে আমাদের কতৃত্ব বোঝাতে হয়
আমাদের অস্তিত্ব নির্ভর করে ফাঁকা হুঙ্কারে!!!

(২৪ শ্রাবণ ১৪১৭ বঙ্গাব্দ)

দুরত্ব

অতপর ভালোবাসা ফিকে হয়ে যাচ্ছে—
তোমাকে ভেবে এখন আর রাত জাগতে ইচ্ছে করে না;
জানি তুমিও ঝেড়ে ফেলে দিয়েছ দুনির্বার ভালবাসা
এখন সবকিছুই যেন যান্ত্রিক,
অতি হিসেব-নিকেশ করে আমদের পথ চলা।
দুজনেই দুজনাকে কেমন যেন এড়িয়ে—
পাছে যদি দৃষ্টি মিলে যায়,
যদি দুজনেই বুঝে ফেলি
দুজনেই দুজনার স্পর্শের বাইরে
যদি বুঝতে পারি কেন চোখে দীর্ঘশ্বাস
তবুও আমরা একই সরলরেখায়
খুঁড়ে খুঁড়ে চলছি বারোমাস।

(১০ শ্রাবণ ১৪১৭ বঙ্গাব্দ)

তুমি, ভাবনা ও ভয়

তোমাকে ভালোবাসি —
যখন আধারে দীঘির জলে আটকে পড়ে আধোপূর্নিমা
চাতক চোখে নির্ঘুম দৃষ্টিতে তোমায় নিয়ে তখন ভবঘুরে ভাবনা।
আর রাতের মৃদু বাতাসে যখন শীতলতা নেমে আসে,
তখন তোমার মাঝে খুজে বেড়াই উষ্ণতা।

রাত জাগা তারাদের নিয়ে গড়া আলোর সেতু
সে সেতুপথ ধরেই তোমার কাছে আমার পৌছে যাওয়া।
জেগে থাকা রাতের শেষে আসে তন্দ্রাচ্ছন্ন ক্লান্ত প্রভাত;
সেই বেলা-স্বপ্নেও তোমার আভা ছড়িয়ে যায়,
আর ঠিকানাহীন কল্পনায় হাত বাড়িয়ে তোমায় আলিঙ্গন
অথবা কল্পনায় তোমার শাড়ির আঁচল আমায় ছুয়ে যায়;
আবার কখনোবা গভীর ভ্রমে শুনি তোমার চুড়ির ঝঙ্কার,
বেড়েচলা সময়কে করে অস্সীকার।

পাতার সবুজের থেকেও গারো আমার বিশ্বাস
অবচেতনায় আমাকে নিয়ে তোমার স্বপ্নবিলাস.
তবে খুব ভয় হয় যখন ভাবি— তুমি যদি অন্যের হও
নাছরবান্দা আমি—
তাই হিসেব কষি তোমায় ছিনিয়ে নেবার।

অশুভো এক শীতল শিহরণ বয়ে যায় যখন ভাবি— যদি হেরে যাই
যদি রুক্ষ বাতাসে উড়ে যায় ভালবাসা!
তবে জেনে নিও, চৌচির হয়ে ধুলোয় মিশে যাব!
আরো কি ভয় হয় জানো?
ভয় হয়— যদি আমায় প্রত্যাক্ষান কর;
যদি চিরকালের জন্য চলে যেতে বল,
তুমি অধিকার নিয়ে বললে আমি আর ফিরবনা জেনে।

(১ শ্রাবণ ১৪১৭ বঙ্গাব্দ)

পারিনি

বল আমাকে প্রয়োজন নেই—
তাচ্ছিল্য করে ছুড়ে ফেলে দাও আমার সত্তা
হিমাঙ্কের কাছাকাছি শীতল রাতে
আমার উষ্ণতার কোন প্রয়োজন নেই।

বল— বাদলের দিনে নিয়ে আসা কদম ফুলগুলো
তুমি বিরক্তিতে কাদায় ছুড়ে ফেলে দিবে;
পথে যদি আবার কোনদিন দৃষ্টি মিলে যায়
তুমি মনে মনে আমায় অশ্রাব্য গালি দেবে।

বল— তোমার খুব একাকী দিনে
আমার কন্ঠ খুব বিচ্ছিরি লাগে;
আমার সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো মনে পড়ে গেলে
তোমার নিজেকে খুব অশুচি মনে হয়।

বল— তুমি আমায় ভালোবাসো না,
আমি তোমার জীবনে শুধুই এক পশলা ভুল,
তুমি শুধু একবার অস্রুহিনা চোখে বল
আমায় দুরে সরে যেতে
যেন থমকে না থাকি তোমার মায়াজালে;
তোমার কিছু ঘৃনা দাও আমায়
আমি ভালবাসতে চেয়েও পারিনি ভালবাসতে!

(২১ আষাঢ় ১৪১৭ বঙ্গাব্দ)

বেওয়ারিশ

লাশকাটা ঘরে ভীড় বাড়ে
মৃত্যুর উত্কট গন্ধে চারিদিকে
কেউ কেউ লৌহ বিছানায়
কারো ঠাই মেঝেতে

বাইরের রাত জাগা পাখিদের ডাক
অন্ধকার মেশানো আলোর সাথে
আসে আধখানা খোলা জানালা দিয়ে.
মৃত্যুর দম্ভতা ম্লান করে দেয়
ভেতরের বৈদ্দুতিক বাতির আলো

এখানে মৃত্যুরই জয়
এখানে জীবন আতঙ্কিত.
চরণের বৃদ্ধাঙ্গুলিতে বাধা অনুক্রমিক
ভুলিয়ে দেয় তাদের প্রকৃত পরিচয়

নিথর লাশেদের বোবা চিত্কার
আপন কাউকে পাবার আশায়
আবার কারো কারো আপন কেউ নেই
তারা ছোপ ছোপ রক্তে ভেজা লাশ
জীবনটার মতই ক্ষত-বিক্ষত

তাদের জন্য কোন শব-যাত্রা নেই
নেই কোন অশ্রুর বন্যা
তারা পড়ে থাকে লাশকাটা ঘরের কোনায়
জীবনের মতই মৃত্যুর পরও বেওয়ারিশ.


(২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪১৭ বঙ্গাব্দ)

হারাচ্ছে...

সবকিছু কেমন জানি দুরে সরে যাচ্ছে
প্রিয় সময়গুলোর ইজারার মেয়াদ যেন শেষ
আর আলোয় প্রজ্জলিত সমস্ত যেন অন্ধকারে পা বাড়ায়
কিসের নেশায় ওদের ছুটে চলা
নাকি কোন দৈবাত স্রোতে ওদের অজানায় ভেসে চলা?
তবে কি বৈশাখ-গ্রীষ্ম আর আগের মত আলিঙ্গন করে না?
তবে কি ভ্রান্ত চোখে অস্তাচলে একাই পড়ে রইব?
নাকি হবে অযাজিত নতুনের পরশে অপনত্তের বিলুপ্তি?

(১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪১৭ বঙ্গাব্দ)


প্রশ্নবিদ্ধ

ওরা তোমাকে মুছে দিতে চায়
তাদের কাল্পনিক আধুনিকতার ধুষরে
ওরা তোমাকে বদলে দিতে চায়
নিজেদের গড়া সঙ্গায়
ভুলি যেতে চায় আর মুছে দেয়
তোমার গর্বিত অতীত
কুপমুন্ডক তাদের দুনিয়া
গুন্ডিত করতে চায় তোমার ইতিহাস
লুণ্ঠনের লালসা অমিত ওদের
তোমার ধংসের উত্সবে মাতহারা
ওরা বলে তোমায় ভালবাসে
ওদের ভালবাসা নয় কি প্রশ্নবিদ্ধ
ওদের অদ্ভুত আচরনে?

(May 27, 201)

যুদ্ধ শেষে সৈনিক


আমি চলেছি,
পেছনে ক্লান্ত রক্তিম সূর্য ফেলে.
দৃষ্টি জুড়ে সারাবেলার আলো নেই
অথবা হয়তঃ আছে, ক্লান্ততায় ঢেকে.
শুন্যতায় ডুবে সারা মস্তিস্ক চর
অথবা, অযাজিত ভাবনায় ডুবে.
রিদপিন্ড কাপছে অক্লান্ত
এ যেন দুর্বলতা মাদকের উন্মাদনার শেষে.
বাতাস ধুলোয় মিশে চারিদিক,
আর মৃত্যু মেশানো বারুদের গন্ধ
মাঝে আমি তার আলিঙ্গনে.
ছোপ ছোপ রক্তেভেজা ঘাস দুরে ফেলে
আমি আগাই ভিরু পায়ে,
পড়ে থাকা প্রানহীন দেহ পেছনে ফেলে.
আমি চলেছি,
পেছনে বাড়ি না ফেরা কত শুত্রু-মিত্র ফেলে.
আমি সৈনিক,
যেতে হবে,
আছে যত ফেলে.
তবে আজ নয়,
আজ আমি মৃত্যুকে চোখ রাঙানোর উল্লাসে.
হয়্তঃবা আবার জীবন বাজী,
মুল নায়কের যুদ্ধহুন্কারে.

(বঙ্গাব্দ ২৬ বৈশাখ ১৪১৭) 

 

বৃষ্টি খেয়ালে

বৃষ্টি, ছম ছম, চারিদিক
আমি বন্ধি, ঘরে ঘুম
আর রাস্তা ভিজে এলোমেলো.
ঘুমমাখা বিছানায়,
এলোমেলো চাদরের আলিঙ্গনে
আধদৃষ্টিতে চেয়ে দেখি
স্বপ্ন ধুয়ে নিয়ে যায়
অঝর বর্ষণে,
প্রশ্ন রেখে যায়
ঘুমকাতুর আধজ্বলা দৃষ্টিতে.
বৃষ্টিতে সব একাকার
আমায় রেখে যায়
কৌতহলী ভাবনায়.
মুক্ত, তবুও বন্দী চার দেয়ালে
ঘুমমাখা মন বালিশে
অন্যসময়ের অযাজিত খেয়ালে.

(April 24, 2010)

তোর পরাজয়ের আয়াজন

কাপুরুষ, তুই না পুরুষ
ছলনা, তোর নিত্য আচরণ
ভালো মানুষের মুখোশে
অবিরাম তোর বিচরণ
ভুলিয়ে ভ্রূমে, বশেতে
নিয়ে যাস সব ছিনিয়ে
তুই অসুরের অচুচী
কৃতার্থম্মনো কূপমন্ডক
অমৃত তোর রন্ধ্রে রন্ধ্রে
প্রশান্তি মিলবে তোর মৃত্যুতে
জ্বালিয়েসিস, তুই পুড়িয়েসিস
ক্ষত-বিক্ষত আমায় ধুলোতে
রক্তাক্ত চোখ ক্রধেতে
উন্মাদ আমি অশান্ত প্রতিক্ষায়
জ্বালাব তোর প্রতিটি মাংসপিন্ড
প্রতিশোধের অদম্য অনলে
সয়েছি অনেক কাল
শিখেছি বলতে, 'আর নয়'
উল্লাস দেখ চারিদিক,
উপলক্ষ তোর পরাজয়
তুলেছি ঢাল প্রাচীর সমান
অমিরের আঘাত আর নয়
ছিরেছি তোর পরানো গলোরজ্হু
শিখেছি হতে কৃতান্ত
আঘাত বানিয়েছে আমায় অমিতেজা
চোখ মেলে দেখে নে,
পাবি না আর আলোর দেখা!!!

(১৮ই মাঘ ১৪১৬)