জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

রবিবার, ২০ নভেম্বর, ২০১১

খেদ

অন্ধকার পৃথিবী এক ফোটা সূর্যের জন্য কাতর
কিন্তু আমি অন্ধকার খুঁজি সূর্যের নিচে
এই ক্ষুদ্র সময়ের পার্থিব জীবনে
নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছি ভাবনার, স্বপ্নের, ইচ্ছের
পরিশেষে নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছি আমি আমার

যদিও এই নিষিদ্ধ বোতলের তলায়
আমি খুঁজে পাই আলোকিত ফেলে আসা দিন
অথবা অবাস্তবতায় সত্য হয়ে ওড়ে মনগড়া স্বপ্ন
তবুও কি আমি খুঁজি সেই প্রশান্তি-
যা আমার অনেক আগেই পাওয়ার ছিল?
আমি কি অপেক্ষা করি
চকচকে গ্লাসের মনোহর জল শেষ হবার জন্য-
যেন অনাবিল দেখতে পাই প্রার্থিত গন্তব্য?

এসবের যদি উত্তর জানা থাকত
তবে সেই কবেই আমি ছুটে যেতাম-
ছুটে যেতাম সেই প্রশান্তির বেলাভূমিতে
যেখানে আমার যাবার কথা ছিল অনেক আগেই!

শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১১

নিথর

মাতাল হয়ে জেগে থেকে
চন্দ্র বিলাসে অনেক কিছু ভুলে গেছি
ভুলে গেছি জোনাক হয়ে আগুন ছড়ানো
কালচে গারো নীল এক ঝাঁক নক্ষত্রের মেলা
ভুলে গেছি এই বিস্তীর্ণ সবুজ প্রান্তরে
এই মেঘ ছুঁয়ে যাওয়া পর্বতে
আমার অবস্থান কোথায়

যদিও পৃথিবীর শত কুমন্ত্রণায় রক্ত ঝরে
জমাট না বাধা বৃদ্ধ জলপ্রপাতের মত
অথচ এ বিস্মিত লগ্ন জুড়ে কোন যন্ত্রণা নেই
শুধু বুনো হংসীর পরিত্যক্ত পালঙ্ক দেখে ভাবি
আমার অবস্থান কোথায়
যদিও এসব ভাবতে ইচ্ছা হয় না
অথবা ভাবতে ভয় লাগে
অথচ অপার্থিব ভাবনায়
আমাদের পার্থিব জীবন

বুধবার, ১৭ আগস্ট, ২০১১

শেষের কবিতা

এভাবে সব শেষ হয়
প্রচণ্ড বিস্ফোরণে কোন ধ্বংস নয়
পরন্তু একটা হতাশার দীর্ঘশ্বাসে
অবাক দৃষ্টির কোণে
এক ফোটা অশ্রু জলে

এভাবে সব শেষ হয়
অনেক নিস্তব্ধতার কোলাহলে
আকাঙ্ক্ষার আয়না-জলে
জন্ম নেয় অনিচ্ছা-জলজ তরু
অতঃপর রং বদলায় এই জলজ প্রান্তর
অথচ কোন বিস্ফোরণে নয়

দ্বিপ্রহরে বিষণ্ণ ঘুমে
এই ঘরে রৌদ্র হয় অপ্রাসঙ্গিক
শেষ বিকেলে আকাশের নিয়ত রক্তক্ষরণে
মৃত্যু হয় আলোকিত পার্থিব একটি দিনের
চিত্তক্ষোভে থাকা কেউ জানেও না কখন
বিষের মত গগনে অন্ধকার মিশে যায়

তবু কোন ধ্বংসে নয়
নয় কোন বীভৎস অথবা স্নিগ্ধ বিস্ফোরণে
কোন অপার্থিব ক্ষোভে নয়-
শাশ্বত হতাশায়;
এভাবে একদিন সব শেষ হয়ে যায়



সোমবার, ৮ আগস্ট, ২০১১

টেবিল-ল্যাম্প ভাবনা

সময় বদলাবে কালের বালি-ঘড়ি
তবে আমাকে বদলাবে কিনা জানি না
শুনেছি মেঘেদের দ্বন্দ্বে হয় বজ্রপাত
আর বজ্রপাতের পরের নিস্তব্ধতা
আমাকে বার বার জানিয়ে গেছে
"মানুষ অবশেষে একা"
জিগ্যেস করা হয়নি কাউকে
আসলেই কি তাই?
বাতাসের কৌতুকে হাসিতে ফেটে পরে
দুলতে থাকা সারি-সারি বৃক্ষ
বালু মাঠের পরে ওই খালে
এক ঝাঁক পানকৌড়ির মিছিল 
কেউ তো একা নয়!
তবে শুধু মানুষ কেন?
হয়তোবা আমিই ভুল শুনেছি
এই ল্যাম্পপোস্ট-বৃক্ষের নিচে
ভাসমান দোকান গুলোয় কেউ তো একা না
ফুটপাত-চেয়ারে বসে থাকা সারি-সারি মানুষ
বিলবোর্ড বিজ্ঞাপনে হাস্যজ্জল মুখ
একটা চায়ের পেয়ালা ঘিরে সমাবেশ
কেউ একা না; কিন্তু শুধু আমি
এই জনস্রোত ঠেলে যদি হাত বাড়াই
তবে জানি কেউ নেই
আমার কোন বন্ধু নেই!

প্রতিশ্রুতি

মহাজগতের কোন এক সহস্র বর্ষ পূর্তি ক্ষণে
উপবৃত্ত কক্ষপথের অবাধ্য হয়ে
আকাশগঙ্গা পাড়ি দিয়ে
উন্মত্ত ধূমকেতু আসবে পৃথিবীকে ভালোবেসে

আমি আসব একদিন
সেদিন আমার গালে তোমার অনন্য চুম্বন
এঁকে জানিয়ে দেবে আমি আর কারো হতে পারি না

জলজ ঘাসের ওই মাঠে
একলা ডাহুকের কান্নার সাথে আর মিল খুঁজতে চাই না
নিষ্প্রভতায় পেয়ে বসা শশীর সাথে
হাতে চকচকে গ্লাসের রাত্রি নিয়ে বসে থাকতে চাই না

ওই আবীর ছেয়ে যাওয়া অভ্রে আমি ধুসর মেনে নিতে পারি না
প্রিয় কৃষ্ণচূড়ার গুচ্ছে শুঁয়াপোকার অবাধ বিচারণ সইব না
জানি তুমিও করবে অন্য আলোয় স্বীয় ছায়াকে অস্বীকার

জেনে রেখো আমি আসব এই প্রহর ফুরবার আগে
আবারও জেনে নিতে আমি অন্য কারো হতে পারি না

শনিবার, ৬ আগস্ট, ২০১১

নিষ্প্রভতা

এখন শান্তভাবে আমি অপেক্ষা করছি
আমার ব্যক্তিত্বের নাটকীয় কুগ্রহের জন্য;
আবারও প্রাণবন্ত হবার অপেক্ষায়
এবং আনন্দময় ও স্বাভাবিক

শহর ধুসর হয়
বাদামী ও হলুদ লেগে যায় গাছে
তুষার আর হাসির আকাশ
সবসময় ছোট হয়ে আসে
হয় কম আনন্দময়
শুধুই গাঢ় নয়; ঠিক ধূসরও নয়
হতে পারে এটা বছরের সবথেকে অনুষ্ণ দিন

এসব নিয়ে সে কি ভাবে?
মানে বোঝাতে চাইছি- আমি;
আমি এসব নিয়ে কি ভাবি?
যদি এসব আমার চিন্তায়
তবে আমি কি আবারও আমার?

(ফ্র্যান্ক ও'হেরার "মায়াকভস্কি" কবিতার অবলম্বনে)

শুক্রবার, ৫ আগস্ট, ২০১১

মুনে খায়েশ জাগে পেরেম করবার

যখন দেখি
রিক্সার হুড তোলা- ভিতরে কপোত-কপতি
চিড়িয়াখানায় বান্দর উকুন বাছে বান্দরনীর
বৃষ্টি তে ভিজ্জা ইলেকট্রিক খাম্বার উপড়
একটা চড়ুই বেহুদা ঘষা-ঘষি করে আর একটা চড়ুইর লগে
অথবা মাইনষের একই সিন পার্কের বেঞ্চিতে
যখন দেখি
বৈদেশি গেঞ্জি কিনতে আমি একলা শপিং মলে
ছুডো-ছুডো পুলাপাইন হাত ধইরা
ঢেলা-ঢেলি কইরা হেইলা-দুইলা হাটে
হাসি আসে না তবুও দাঁতের দোকান খুইলা হাসে 
যখন দেখি
মোবাইলে ইয়াত্তু ব্যালেন্স
অথচ কল দেউনের কেউ নাই
বিজ্ঞাপনের মিথ্যা সিন বিশ্বাস খাইয়া আমার মুখে প্রসাধনী
অথচ এই বদনে হাত বুলানোর মত কোন সুন্দরী নাই
যখন দেখি
গায়কের বিশেষ কারো জইন্য স্বরনালি ছিড়ার উপক্রম
ভিলেন পিডাইতে পিডাইতে নায়কের হাতে ঝিনঝি ধইরা গেছে
পিছে তারতম্য পূর্ণ আবহ-সঙ্গীত বাজে আর তার লগে
নায়কের আগমনে নাইকা ট্যারা নয়নে মুচকি হাসি 
যখন দেখি
ভ্যালেন্টাইন ডে তে "ভালবাসা দিবস শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার না"
এই লেকচার দিতে দিতে মুখে জজবা উঠানো লাগে
গ্রুপের একমাত্র ক্যাবলা বন্ধুটাও যখন আড্ডা ছাইরা
অজ্ঞাত রূপসীর লগে ফিসির-ফুসুর আর হি হি কইরা হাসে
যখন দেখি
এইসব দেইখ্যা চুপচাপ নিশ্বাস ফেলি
নির্মলেন্দুর "তোমার চোখ এতো লাল কেন" কবিতাটা পড়ি
যদিও জানি না কেমনে কি
তবুও তখুন মুনে খায়েশ জাগে পেরেম করবার!


বুধবার, ৩ আগস্ট, ২০১১

অশিষ্ট

ব্যর্থতা, অভাব, শূন্য ঘর
এইসব আমাদের বাচতে শেখায়
ঝরা পাতা ধরে আঁকড়ে থাকা পিপড়া
প্রবল স্রোতের সাথে যুদ্ধ করে-
এইসব আমাদের লড়াই শেখায়

প্রয়োজন আমাদের রুঢ় হতে শেখায়,
শেখায় অকারণে গুড়িয়ে দিতে পিপড়ার রাজ্য;
ভেঙ্গে দিতে মমতায় গড়া চড়ুই পাখির বাসা
প্রয়োজন আমাদের অশুভ শেখায়
আর অশুভ যদি দেয় মুক্তি
তবে কি এই সামুদ্রিক ঝর,
তান্ডব প্রিয় কালবৈশাখ, রাগে কম্পমান ভূমিকম্প,
রক্ত হিম করে দেয়া রাত্রির জন্য শুধুই কি আমি দায়ী?
উষ্ণ বায়ুর সাথে শীতল বায়ুর অযথা মৈথুন,
ভূপৃষ্ঠে হটাত কোন শিলা-চ্যুতি, নিন্মচাপ কিংবা,
সূর্যের অবহেলা এইসব কি কারো নজরে পড়ে না?
তবে কেন শুধু আমার বখে যাওয়া সময়ই
শেকলে বন্ধী হয়ে অপবাদের পাথর তলে?

প্রয়োজন মগজ ঢেকে দেয় শেওলার মতন
উন্মত্ত করে তোলে শিকারি নেকড়ের মতন
বাঘের থাবায় অথবা গোখরার বিষে
আমার ভেতরের দানব
আমার অস্তিত্ব হারিয়ে যেতে দেবে না
জীবন-জঙ্গলে মৃগের আর্তচিত্কারে
রক্ত-স্নান করে হলেও সে আমাকে বাঁচাবে

গিয়ানজাম

প্যাডে জানি কেমুন ব্যথা অনুভব হইতছে
ডাকতর কহিলেন;
"প্রকৃতির সহিত যোগাযোগ উন্নত করেতে হইবেক"
অতঃপর কোষ্ঠকাঠিন্ন্যের ঔষধ গিলিলাম
উহাতে সিংহাসনে বসিবার মাত্রা বাড়িল শুধু
তবুও প্যাড বেদনার উপশম হইলো না
নিতান্তই হতাশ হৈয়া গেলাম বাতাস খাইতে
তখনই আমার উপড় নাজিল হইলো এক জ্ঞানভান্ডার
বলিল; "কি হয়েছে দাদা"
জানি উত্তর না পাউয়া পর্যন্ত শ্যালকের পুত্র থামিবে না
ঘ্যানতানো ঠেকাইতে তাই পুরা সিন তর্জমা করিলাম
শুনিয়া সে দন্তের দোকান খুলিয়া কহিল:
"প্রেম হইয়াছে.... কবিতা লিখেন, উপশম পাইবেন"
বুঝলাম; আমারে কুত্তায় কামড়াইছে!

বুধবার, ২৭ জুলাই, ২০১১

আমি আর ফিরব না

আকাশ ছেয়ে যাওয়া পাখির দল
ক্লান্ত কিনা তা আমার জানা নেই
উন্মাদ শীতল ঝড়ো হাওয়া
অজস্র জলরাশির সমুদ্র
দিন রাত্রির বিভ্রান্ততা পেরিয়ে
বার বার ছুটে আসতে আসতে আমি ক্লান্ত

বদলে যাওয়া চেনা রাস্তা
বাসার মুখের প্রিয় সেই গলি
সময়ের অবহেলায় রং হারানো প্রিয় নিবাস
ঘুণে খাওয়া চৌকাঠের দুয়ার
এসব আমাকে অস্থির যন্ত্রণা দেয়

সময়কে বীজকোষে বেধে যাই
প্রত্যেক বিদায়ের আগে
অথচ ভুলে যাই সময়কে তো বদলাতে হয়
তার সাথে বদলাতে হয় প্রিয় মানুষগুলোর
হারাতে হয় অনেক মানুষের
হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায় না আগের মতন
নাগরিক জ্যামে সবাই আটকে আছে
মুঠোফোনের দাপটে হয়না
প্রিয় মানুষগুলোর কোলাহলে সন্ধ্যা
এসব শুধুই আমাকে হতাশ করে

এখন ফিরলে দেখি না
ছাদে রোদ-তপ্ত আচারের সুবাস
বারান্দায় ধুলো জঞ্জাল
আকাশে ঘুড়ির লড়াই
বৃষ্টি জলের নদীতে কাগজের নৌকা!

এতটা অনেকটা ভিড়েও অবাক নিঃসঙ্গতা
আমি ফিরে যেতে চাই
তবুও আমার আর ফেরা হবে না
শূন্যতা আর স্মৃতির মাঝে ফিরতে ভালো লাগে না
বারবার নিজেকে অপরাধী মনে হয় চলে যাবার জন্য
এই শহর মনে করিয়ে দেবে বার বার কি হারিয়েছি
তাই আমি ফিরব না!

শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০১১

প্রেক্ষিত

আমি দেখেছি
আমার প্রজন্মের অগণিত জ্বলছে অনিশ্চয়তা দুঃখ, দুর্দশা আর হতাশায়
এলোমেলো পায়ে আগাচ্ছে আবার পিছচ্ছে গৃহহীন বদ্ধ উন্মাদের মত
অসংখ্য বোঝা নিয়ে তারা ভবঘুরে
গন্তব্য জীবনের এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্ত

আমি দেখেছি
কর্পোরেট কৃতদাসেরা মুখে হাসির ব্যানার লাগিয়ে ডেস্ক নামক জেলে বন্ধী
প্রতি সকালে ব্যতিব্যস্ত তারা ছোটে গুরুগম্ভীর ক্ষেপানাস্রের মত
অথচ ভেতরে সবাই চলছে খুড়িয়ে খুড়িয়ে অসহায় খোঁড়া ত্রিপেয় কুকুরের মত
তাদের চকচকে আমদানিকৃত উঁচু ব্র্যান্ডের লেবাস তাদের স্বত্বাকে নিয়মিত পড়ায় মুখোস
অযথা সুবাস ছড়ানো দামী অথবা নকল ফ্রেগ্রেন্স চেপে ধরে নিশ্বাস
তারা কথা বলে মার্জিত, তাদের কথোপকথনে লুকিয়ে থাকে অসংখ্য হিসাব-নিকাশ
অথবা যাবতীয় অনাকাঙ্ক্ষিত বস্তা বোঝাই গ্লানি

আমি দেখেছি
বেকার কিছু বিভ্রান্ত আত্মা
দৈনিক পত্রিকা ঘেঁটে খুঁজছে জীবনের গন্তব্য
জুতোর তলা ক্ষয়ে ক্ষয়ে এখন তাদের হৃদয়ে ধরেছে ক্ষয়
বাসা থেকে শুরু করে এলাকা সুদ্ধ সবাই তাদের খুঁচিয়ে কথা বলে- সামনে অথবা পেছনে
তবু তারা পকেটে ছেড়া দুটি দশ টাকার ও একটি দুটাকার নোট নিয়ে মাথা নুয়ে হেটে চলে
ইস্কুলে থাকতে গল্পে শুনেছে "অদম্য ইচ্ছার হয় জয়"
কিন্তু আজ তারা জেনেছে ইস্কুলেও কত মিথ্যে আশ্বাস দেয়া হয়

আমি দেখেছি
আমার প্রজন্মের কত মাদকে মাদকে হারিয়ে গিয়েছে চিরতরে
এখন তাদের পাওয়া যায় 'স্পট' নামক অভিশপ্ত জঙ্গলে-
তাদের প্রাণহীন নিথর দেহ আর রক্তাক্ত নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে অযথাই ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে
পরিচিত সবাই এখন ভিনগ্রহী- পরিবার, বন্ধু, প্রিয়জন
এখন তারা জলাতঙ্কিত বেওয়ারিশ কুকুরের মত- এড়িয়ে তাদের চলছে সবাই

আমি দেখেছি
অগণিত স্বপ্ন ব্যস্ত নগরীর রাস্তা পেরুতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনার স্বীকার
আলোহীন অন্ধ-গলিতে পথ খুঁজতে গিয়ে আততায়ীয়ের ছুরিকাঘাতে রক্তাক্ত
কিংবা এইসব স্বপ্ন আটকে আছে জট খুলবে না এমন কোন জ্যামে

আমি দেখেছি
আশার খোঁজে এই নগরীর ধোয়া ঠেলে আকাশে তাকায় বিধাতার তরে
সেখানে আকাশে আকাশে সংঘর্ষে গুড়ো কাঁচের মত ঝর-ঝর করে ভাঙ্গে অনাথ আকাঙ্ক্ষা

আমি দেখেছি
ওই দেয়ালের আড়ালের উনুনে জ্বলতে থাকা গৃহপালিত নারী
সামাজিক নিয়ম, প্রথা, ভয়, লজ্জায় হিংস্র-অমানুষ এক কাপুরুষকে দেবতুল্য ভেবে
একটিবারও বলেনি "আমায় বাঁচাও এসে"
তার কান্না শুধু শুনেছে সযত্নে রাখা বালিশ আর জানালার লৌহ শিক

আমি দেখেছি
ভ্রান্ত বিশ্বাসে মাতাল কাউকে উপদেবতা ভেবে রক্তাক্ত রাজপথ
গণতন্ত্রের নামে পরিবারতন্ত্র কিভাবে রাষ্ট্র-যন্ত্র নষ্ট করে দেয়
বাক-স্বাধীনতার জন্য আজ যাদের স্বীয় স্বরনালী ভেঙ্গে যায়
তারাই সময়ের ব্যবধানে বাহুবলে এসে চেপে ধরে তোমার আমার মুখ
আজ যারা তোমার আমার অধিকারের জন্য প্যান্ডেল টানিয়ে অনশন করে
তারাই একদিন তোমাকে-আমাকে নিয়ে যাবে অনাহারী রাতে

আমি দেখেছি-
তুচ্ছ কারণে পিচাশের হাতে চৌদ্দ খণ্ডিত লাশ হওয়া যুবকের চোখে ভয়;
হিংস্র বন্য কুকুরের পালের মত উন্মাদ জনতার ঔদ্ধত্যয় থেঁতলে যাওয়া বালুময় লাশ;
জীবন্ত বলি হওয়া সেই নিষ্পাপ ধর্ষিত তরুণী বেচে থাকার মানে খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত;
রক্ষণশীল ভণ্ডরা স্বর্গ-নরকের ঠিকাদারি নেবার ভান ধরে ধর্মের নামে দাসত্বের শেকলে বাধবার প্রচেষ্টায়
উদারনৈতিক-বাদীরা ধর্ম নিরপেক্ষতার নামে আজ মূল্যবোধ ডুবিয়ে মারছে মদের গ্লাসে
কথিত কৃতবিদ্য সুশীলেরা পশ্চিম বিশ্ব হতে পৃষ্ঠা ছিঁড়ে এনে শেখাচ্ছে শেখানো বুলি 

আমি দেখেছি
মনুষ্যত্বের অবক্ষয়, রগচটা বাঙালির ঔদ্ধত্য-পনা, এই মানচিত্র জুড়ে অসংখ্য হতাশ আত্মা,
এই সমাজের অবাক সামাজিকতায় ঝরে যাওয়া অসংখ্য অশ্রু
আমি দেখেছি যা আমি দেখতে চাইনি আজ; দেখতে চাইনি গতকাল
...তবুও আমাকে দেখতে হচ্ছে!  

(অসমাপ্ত)

সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০১১

ডাস্টবিনে থাকে ছুটুলুকেরা

অত্র এলাকায় একটা নেড়ি কুত্তা ছিল
ভদ্র-সভ্য বড়লুকের কুত্তারা তারে
উচা দেয়ালের প্রাসাদের ভিতর দিয়া গাইলাইতো
তয় মাংসের দুকানের মিডেল ক্লাস কুত্তারা
তারে মাঝে-মাঝে খাউন দিত
মাগার জম্মের পর হইতে ময়লার ডাস্টবিনে যোগাইছে তার ডিনার
ঐখানে আধা ল্যাংটা বস্তির পুলাপান তারে লৌড়াইতো
তয় হুদাই খেলুনের জন্য, পিডানুর জইন্য না
ডাস্টবিনের খাউন নেড়ি কুত্তার কখনই ভালু লাগত না
তাই একদিন জিদ্দের চুড়ে দ্যাশ ছাড়িবার জইন্য সে তত্পর হইল
ইদিক-সিদিক ঘুইরা-ঘাইরা ইস্টুডেন্ট ভিসা লইয়া বৈদেশ গেল
কিন্তু বৈদেশেও সে নেড়ি কুত্তা
ইখানে-সিখানে এখনও সে ভাতের গরম মাড়ের ছিডা খায়
তয় এক্ষুন আর সে গাইলায় না; কয়, "বৈদেশই ভালু"
অতপর একদিন বৈদেশ হইতে নেড়ি কুত্তায় ঘুরতে ডাস্টবিনে আইল
কিন্তু এখন এই ডাস্টবিনে সে নেড়ি কুত্তা না; তিনি "জনাব কুকুর";
কেউ কিছু জিগাইলেই ঘেউ দিয়া কয় "ডাস্টবিনে ছুটুলুকেরা থাকে"
আমরা আধা ল্যাংটা বস্তির পুলাপান বলি
"মাকানচুয়ার পুলা জন্মভূমিরে এত্ত সহজে ভুইলা গেলি???"

সাপের গ্রামে একদিন যেতে হবে

সাপের গ্রামে একদিন যেতে হবে
পুরানো খোলসটা এখনো বদলায়নি
যদিও প্রিয় হরিণী জানবে না আমি সাপের গ্রামে
জানবে না স্বপ্নবিলাসী বন্ধী ময়না
তবুও সাপের গ্রামে একদিন যেতে হবে
মদের নেশায় চুর হওয়া সাপুড়ে
জানবে না কেন বীণ শুনে কেন
আসেনি ছুটে গ্রাম ছেড়ে একটাও সাপ
পোড়া মাটির গর্ত খুঁড়লে দেখা যাবে
ইঁদুরের সমাবেশ এই রাত্রি জুড়ে
বেজিদের সময় থাকবে না
সাপের সাথে লড়াই করবার
সাপের গ্রামে একদিন যেতে হবে
যেতে হবে এই কাদামাটির পরের পোড়া জমিনে
যেখানে স্বপ্নবিলাসী ময়না নেই
নেই আমার ছায়ায় ঘুরে বেড়ানো হরিণী
যেখানে নাগিনীর ছোবল বিষ ঢেলে দেবে না
ঢেলে দেবে প্রতিটি রন্ধ্র উপ-রন্ধ্রে নেশাময় প্রশান্তি!

জঙ্গলে যামুগা

বেহুদাই চিল্লায় আবুদেরা
বেবধেরা চিল্লা-ফাল্লির মইধ্যে নাই
শুনছি সন্যাসীরা জঙ্গলে যাইত
মঙ্গল সাধনা করতে
উদাম হৈয়া কে কুন মঙ্গল ঘটাইছে
ইডা আমি হয়ত বুইঝপো না;- দরকার নাই
তয় আমিও জঙ্গলে যাইতে চাই
দুনিয়ার যত ছাই ভাল্লাগে না
প্রতিদিনের যাবতীয় বাল-ছালে গা খাউজায়
আর ভদ্রতা, বিনম্রতা, প্রেত্তহ বাঁশ খাউয়া
জীবন নামের কুত্তার লৌড় খাউয়া
স্টেটাস রক্ষায় বাল ছিড়া আঁটি বাঁন্ধা
এইসব বাল-ছাল আলুছানা ভাল্লাগে না
আমি আবুদ নই; পুরাই বেবুধ
তাই চুপচাপ একদিন জঙ্গলে যামুগা
তয় মঙ্গল সাধিতে নয়;
শুধু এই বেঞ্চুদ জিন্গী হইতে অবসর নিতে!!!

রবিবার, ১৭ জুলাই, ২০১১

ইলেকট্রিক সভ্যতায় অবাক সহবাস

এই পোস্ট মডার্ন যুগে
ইলেকট্রিক সভ্যতায় কি
ভালবাসা বায়নারী ডিজিট?
"তোমাকে ভালবাসি"-এটা
বলতে কি সি-প্লাস-প্লাস ভাষা জানা লাগবে?
চলতি পথে তোমাকে দেখে ভালোলাগা কি হবে না?
নাকি এখন সামাজিক ওয়েবসাইটে
দিতে হবে বন্ধুত্বের আবেদন?

তোমার ইতিবিত্তান্ত তো জানা হবে
কিন্তু তোমার জীবনের মানে বুঝব কি?
বাংলিশ ভাষায় যদি বল
"এই সব ভালো লাগছে" অথবা
"ভালো লাগছে তোমাকে"
তবে কি সত্যিই বোঝা যাবে এর মানে?
তুমি যদি অভিমান কর তবে আমি কি বুঝব?
"ইমো" দিয়ে কি আবেগ বোঝানো সম্ভব?  
হাসি যদি লিখে প্রকাশ করতে হয়
তবে সেই হাসি কি নিরর্থক নয়?

আধুনিক প্রযুক্তি মুক্তি দিয়েছে
শিরি-ফরহাদের ভালবাসা হতে
এখন মুঠোফোনে চাইলেই তোমার কণ্ঠ শোনা যায়
রংচটা মানিব্যাগে প্রেমিক রাখে না প্রেমিকার ছবি
প্রেমিকার চুড়ির বাক্সের নিচে থাকে না প্রেমিকের ছবি
তবে এতে ভালবাসার দূরত্ব কি বেড়েছে নাকি কমেছে
মাপার সময় নেই কারো
এখন সবাই সামাজিক ওয়েবসাইটে মন্তব্য করায় ব্যস্ত

তবে আমি জানি,
চোখে চোখ না রাখলে- তোমার সুগন্ধে বিভোর না হলে-
- তোমার অকারণ হাসি না শুনলে-
- তোমার নীরবতা অনুভব না করলে
ভালবাসার গভীরতা  বোঝা যায় না
মুঠোফোন, এস.এম.এস, ইন্টারনেট এসব...
কাছে পাবার ব্যাকুলতাকে কমিয়েছে কি?
- জানা নেই আমার
আমি শুধু জানি ডিজিটাল প্রযুক্তি তোমাকে কাছে আনে
তোমার আমার মাঝে শুধুই এক অদ্ভুত দূরত্ব তৈরির জন্য!

শনিবার, ২৫ জুন, ২০১১

বাসনা

ইচ্ছে করে গোলাপটাকে চড় মেরে
ফেলে দেই হাসনাহেনার আবর্জনায়
লজ্জায় পড়ে হলেও গোলাপটা গন্ধ শিখুক
শুধু রঙের সাজে কি ফুল হওয়া যায়???

মুঠো ভর্তি মরিচের গুড়ো
ইচ্ছে করে আলোর চোখে ডলে দেই
উজ্জ্বলতার অহংকার তো শিখেছে খুব
এবার কাঁদতে কাঁদতে শিখুক সে অন্ধকার!!!

মেঘের মাথা ফাটিয়ে জল নামাই
ইচ্ছে হলে সেই জলে আগুন পোড়াবো
হতচ্ছাড়া আগুন শিখুক দহন কেমন লাগে!!!

সেই দিন মাত্র হাটতে শেখা- দমকা হাওয়া;
আজ কাল বৈশেকের মুখোস পরে দিচ্ছে ছুট
ইচ্ছে করে ল্যাং মেরে ফেলে দেই,
হতচ্ছাড়াটা শিখুক শহুরে বাতাসের মত
ভীষণ জ্যামে আটকে থেকে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলতে!!!

ইচ্ছেটার ইদানীং ছায়াপথ জুড়ে বিচরণ
ইচ্ছে করে ইচ্ছেটাকে বেদম প্রহারে শেখাই বাস্তবতা
শুকতারার আলোতে লুকাতে চাইলেই কি সম্ভব?
দেখুক সে তার খামখেয়ালির পরিণতি— আমার আত্মদহন!!!

রবিবার, ১৯ জুন, ২০১১

সম্ভাব্যতার অন্ধকার অংশ

এইসব যদি জানা হয়ে যায়---
আমরা যদি আমাদের প্রশ্নের উত্তর খুঁজে না পাই?
অথবা ধর যদি উত্তর পাই
কিন্তু তা মেনে নিতে আমরা নারাজ
কিংবা উত্তর আমাদের বোধগম্য নয়
যদি ধর আকাশটা আর ভালো না লাগে
ঘাসের বিছানায় যদি ধর লাল পিঁপড়ের বাসা
যদি এমন সময় আসে এক দিন
যানজটে বসে সূর্যাস্ত দেখে দেব রিক্সার হুড তুলে
যেন সেই সময়গুলোর সাথে হটাত মিল খুঁজে না পাই
যদি ধর একদিন শহরের এই খাদ্য-গুদাম গুলোয় আর না আসি
চকচকে প্লাস্টিকে মোড়ানো মেনু কি আমাদের খুঁজবে?
অথবা যদি শুধু আমি আসি কিংবা শুধু তুমি
তবে আমরা কি তখন একা একা আসব?
অটুট বিশ্বাসে একদিন ধর দুজনেই দুজনার সীমানায়
যদি সেই বিশ্বাসই ভেঙ্গে যায়?
আমরা কি তখন খুব বেশি অবাক হব?
যদি একদিন তোমার জন্য ঘর-ছাড়া আমি
অথবা আমার জন্য ঘড়-ছাড়া তুমি
সামান্য সময়টুকুই খুঁজে না পাই?
তবে কি আমরা দুজনেই ভাববো "এভাবে তো চাইনি"

শুক্রবার, ৩ জুন, ২০১১

কাব্য-পত্র

প্রিয় কবি,
হ্যাঁ, আপনাকেই সম্বোধন করে বলা বললাম
শুনেছি ইদানীং কুয়াশার সাদায় আপনার ঘোর লেগে থাকে
কল্পনার অলিগলিতে রাতবিরেতে আপনার আনাগোনা
শুধু আপনায় 'কবি' বললেই হতচকিত হয়ে পার্থিব জগতে দৃষ্টি ফেরান
তবে শুধুই একবার এবং অর্ধেক মুহূর্তকালের জন্য

প্রিয় কবি,
জীবন, সমাজ, সম্পর্ক, মানুষ
এসবই শুনেছি আপনার কাছে দুর্বোধ্য কিছু শব্দ মাত্র
মায়া, আবেগ, উল্লাস, দুঃখ
এসব দেখে আপনি অবাক হন-
কেন বলুন তো?
কেন নিজেকে এই জগতের বাইরের মনে হয়?
কেন চারপাশ তাকান অবাক দৃষ্টিতে?
আপনি তো পর্যটক নন

প্রিয় কবি,
বলুন তো কেন তাণ্ডব আপনার ভালো লাগে?
কেন মেখে দেন বারুদের গন্ধ কৃষ্ণচূড়ায়?
বলুন তো কেন প্রবল জলোচ্ছ্বাসে আপনি ছুটে যান সাগর তীরে?
কেন বিদ্যুতে পোড়া ছাই দিয়ে লিখেন নিজের নাম?
বলুন তো কেন বখাটে সময়গুলো আপনার ভালো লাগে?
এখন তো লাঠিয়ালও নেই আর চড় দখলও নেই
তাই মাঝে মাঝে কবিয়াল আপনি দখল করেন বর্ণমালা

প্রিয় কবি,
নক্ষত্র রাজ্য হতে শুরু করে নগরীর অন্ধ-গলির
সবাই ঠিকই জানে- আপনি কবি নন
আপনি কেবলই শব্দের অপারদর্শী রাজমিস্ত্রি
ধার করা সব বর্ণমালা গেঁথে চলেন- কাব্য প্রাসাদ বানাবেন বলে
আপনার কবিতাগুলো অতি হিসেবি
বলি- অঙ্ক কষে কি কবিতা লেখা হয়?
আগেই জেনেছিলেম আপনি কাণ্ডজ্ঞানহীন
এখন দেখছি দিনে দিনে চড়ুই পাখির মত বেখেয়ালি হয়ে যাচ্ছেন
যেখানে সেখানে পাওয়া যাচ্ছে আপনার পরিত্যক্ত কালো-বাদামী পালঙ্ক!!!


বৃহস্পতিবার, ২ জুন, ২০১১

পরিচিত অপরিচিতা

এতটাকাল পর জানা যাবে তোমাকে জানা হয়নি
বর্ষা এসে চলে যাবে
নগরীর এই গলির রাস্তা ভিজবে না
বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকা আমি জানব না কি কারণ

মুঠোফোনে একদিন ফোন করা হবে
হটাত তোমায় মনে পড়ে গেল বলে
রিং হবে অনেকক্ষণ, তুমি তুলবে না;
তারপর যান্ত্রিক কণ্ঠে এক তরুণী জানাবে
"এই মুহূর্তে সংযোগ দেয়া সম্ভব নয়"
তখন আমি ভাববো-
এতটাকাল পরও তোমাকে জানা হয়নি

"স্পর্শের বাইরে কি থাকতে পারে ভালবাসা?"
"তোমার ছায়া হীনে কি তপ্ত এই মন কি পাবে অবসর?"
এইসব জিজ্ঞেস করলে আমাকে বোকা ভেবে  তুমি হাসতে.
কিন্তু এখন শুধুই শোনা যাবে তোমার নিরুত্তর নীরবতা
তারপর জানব- এতটাকাল পরও তোমাকে জানা হয়নি

যদি কোন একদিন আমি দাড়িয়ে রাজপথে
তুমি একবারও হাসবে না- দেখেও দেখবে না
দ্রুত পায়ে যাবে দূর থেকে দুরে
হাতে থাকা তোমার প্রিয় অর্কিড তখন জানাবে আমায়
-এতটাকাল পরও তোমাকে জানা হয়নি!!!


মঙ্গলবার, ৩১ মে, ২০১১

তোমার স্বর্গ

শুভ্র শূন্য কাগজ
যে কালো দাগ লেগে আছে সে শুধুই কলমের ছায়া
কাগজের শুভ্র বিশাল প্রান্তরে একজন দিক খুঁজে না পায়
ভাবনার ধূমকেতু ভেঙ্গে পড়ে একদিক-সেদিক
তারপর সব জলোচ্ছ্বাসের তাণ্ডবে ভেসে বহুদূর

তোমার স্বর্গ আমাকে দুরে ঠেলে দেয়
ঠেলে দেয় কাঁচ ভাঙ্গা স্বপ্নের পথে
তোমার স্বর্গ আমাকে ভেঙ্গে দিতে চায়
শুধু চায় দুরে ঠেলে দিতে

নরকের অনলে তপ্ত পাথুরে পথে
শুনেছি সহস্র ভাঙ্গা স্বপ্ন নাকি জন্ম দেয় শত গল্পের
আমাদের প্রিয় অতীত জড়ানো সুতোয়;
শুনেছি আকর্ষণ সূত্রের নাকি কোন ছন্দ নেই
দাগী অপরাধী ভালবাসা অকারণ বিচারের কাঠগড়ায়!

তোমার স্বর্গ আমাকে দুরে ঠেলে দেয়
ঠেলে দেয় কাঁচ ভাঙ্গা স্বপ্নের পথে
তোমার স্বর্গ আমাকে ভেঙ্গে দিতে চায়
শুধু চায় দুরে ঠেলে দিতে!

সোমবার, ৩০ মে, ২০১১

স্বপ্ন-যন্ত্রে তৈরি হারানো ভবিষ্যৎ

একটা সময় ছিল
আমার প্রতিবিম্ব ছিলাম আমিই
ছিল একান্ত ব্যক্তিগত স্বপ্ন বানাবার যন্ত্র
কত যে বানিয়েছি বৈশাখী মেলার
হাওয়াই-মিঠাইর মত রঙিন স্বপ্ন- হিসেব নেই
শরৎকালের ঘুড়ির ডানায় বেধে স্বপ্ন ওড়াতাম
উড়ন্ত শহুরে দাড় কাকেদের সাথে পাল্লা দিয়ে  
বাবার পোষা গিরিবাজ পায়রাদের মেঘ ছুতে দেখে
উড়তে খুব লোভ হত
তখন আমি ছাদের রেলিঙে দুহাত মেলে দাড়িয়ে
ঠিক যেন বুনো পাখিদের মত আকাশে ডানা মেলে

অতীতে কত যে ভবিষ্যৎ গড়েছি
মহাশূন্যের যেখানে অতীত সময় ঝরনার মত ঝরে ঝরে
একটা সময় আর সময় থেকে মহাকাল
যেন পুরো একটা নদী আর নদী থেকে মহাসমুদ্র
সেখানের সময়-সমুদ্রে ঢেউ হয়ে আছে আমার হারানো ভবিষ্যৎ
সেই সমুদ্র-তীরে যাওয়া বারণ
আমি তাই দূর হতে দুরবিন হাতে চোখ রেখে দেখি
আমার অতীত: আমার স্বপ্ন-যন্ত্রে তৈরি হারানো ভবিষ্যৎ!

শনিবার, ২৮ মে, ২০১১

কৃত্রিম মুক্তি

জ্বলন্ত কল্কির নিচের শুভ্র ধোয়াটে অন্ধকার
আমি মিশে যেতে চাই!
অজ্ঞান অবচেতনার শ্বাসনালী হতে ফুসফুস-
ক্রমান্বয়ে দুষিত ধমনী বেয়ে চলে নদী
জল-রুপী উষ্ণ কালচে রক্ত খোজে মুক্তি
তবুও ধমনির শাসনে শৃঙ্খলাবদ্ধ রক্তের সঞ্চালন
স্রোত বয়ে যায় এই পাপিষ্ঠ দেহ জুড়ে
অভিশপ্ত হৃদপিণ্ডের অবশিষ্ট নেই পবিত্রতা
শুভ্র ধোয়ায় বিষাক্ত রক্তের হয়না হৃদপিণ্ডে পরিশোধন
একদা উর্বর এই মস্তিষ্কে আজ মৃত কোষদের সারিবদ্ধ লাশ
কিছু অদ্ভুত থমথমে নিশ্চুপ হাহাকার
কিংকর্তব্ববিমুর দৃষ্টি গন্তব্য-হীন নিরেট কালো
অথবা চেয়ে আছে অদেখা কোন সময়ের দৃশ্য-পথে!

শ্বাসনালী জুড়ে দমের ছন্দপতন
ফুসফুসও যেন আজ ক্লান্ত
বিশ্রাম খোজে খানিকের
নিস্তেজ দেহ- এই কুঠুরির এক কোনে আশ্রিত
এখন এখানে কোন বাস্তবতা নেই
কল্কির সূর্য-রোষে পুড়ে সব বাষ্প!
আত্মার তো এটাই কামনা ছিল
সে জানে তার অবকাশ নেই, জীবনের অন্ধকার অধ্যায় হতে
বাস্তবতার নিয়ত রোষানল
অতীতের শকুন-ঠোটে ক্ষত হওয়া প্রতিদিন
তবুও অভিশপ্ত এই আত্মা খোজে
কল্কির সূর্য জ্বেলে ধোয়াটে নগরে ক্ষণিকের কৃত্রিম মুক্তি!!!


শুক্রবার, ২৭ মে, ২০১১

অপেক্ষায়

ঘরের এই আলোয় ঘ্রাণ মিশে নেই তোমার
শুধু আছে তোমার না থাকার গোমট কষ্ট
আর তোমার অজস্র স্মৃতি-

স্পর্শ করা প্রতিটি ধুলোকনায়
তোমার স্বাক্ষর নেই
তবুও যেন আছে- তুমি আছ
তোমার ব্যবহার্য আর আগলে রাখা প্রতিটি স্মৃতি-ছবিতে!

দেহ জুড়ে প্রাণহীন ঘুমের গন্ধ-
অনেকটা দীর্ঘ ঘুম
তারপর অজস্র-কাল দেখা হবে না- কথা হবে না
তারপর হটাত হটাত ঠিকই দেখা মিলবে
পুরনো ছবির দিনগুলির মতই সব স্বচ্ছ
অথচ সেটা শুধুই ঘোরলাগা স্বপ্নে

স্বপ্ন-ঘোরেই হৃদপিণ্ড কাঁপানো, শিরায়-উপশিরায়
অস্থিরতা জাগানো অদম্য আকুলতা--  একটু স্পষ্টতা,
একটু তোমাকে ছুঁয়ে দেখা, আর একটু মুহূর্ত তোমার সাথে কথা বলার!
তারপর সব হতাশায় ভাঙ্গবে ঘুম
আমি জোর করে তবুও চোখ বুজি
জেনে স্বপ্ন তো সত্যি নয়
স্বপ্নের অস্পষ্টতায় তাই তোমার ইচ্ছেগুলো অজানাই রয়ে যায়

কথা ছিল আরও অনেক কথা হবে
তোমার যে যাবার তাড়া ছিল
তা তো দেখিনি তোমার চোখে
কতকাল হয়তঃ অবুঝে তোমাকে কষ্ট দিয়েছি-
ক্ষমা চাইবার মুহূর্ত পর্যন্ত তুমি অপেক্ষা করলে না?
যাত্রা পূর্বে না বিদায় নেবার নিয়ম?
তোমার আঙ্গুল ধরে হাটতে শেখা আমি
বল তো কেমন করে এতটাকাল পাড়ি দেব?
বল তো কেন সেখানে যাবার জন্য তোমার এত ব্যাকুলতা?
যেখানে তুমি যাওনি কখনও; যেখানে আমরা কেউ নেই?
বিধাতার প্রিয় হয়ে চলে গিয়েছ তুমি
আমাদের প্রিয় তো তুমি সবসময়ই ছিলে
তবে আর একটু কাল কি থেকে যেতে পারতে না?

শুনেছি ও পুস্তকে বর্ণিত আছে
তা জেনে বেধেছি বিশ্বশাস
বিধাতার অঙ্গীকারে একদিন ঠিকই তুমি আবার বাস্তব,
শুনেছি ও'পার ঠিক যেন সব প্রিয় সেইসব দিনের মত!
....তাই অপেক্ষায় রইলাম!

(উৎসর্গ: প্রিয় বাবা)