জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০১১

প্রেক্ষিত

আমি দেখেছি
আমার প্রজন্মের অগণিত জ্বলছে অনিশ্চয়তা দুঃখ, দুর্দশা আর হতাশায়
এলোমেলো পায়ে আগাচ্ছে আবার পিছচ্ছে গৃহহীন বদ্ধ উন্মাদের মত
অসংখ্য বোঝা নিয়ে তারা ভবঘুরে
গন্তব্য জীবনের এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্ত

আমি দেখেছি
কর্পোরেট কৃতদাসেরা মুখে হাসির ব্যানার লাগিয়ে ডেস্ক নামক জেলে বন্ধী
প্রতি সকালে ব্যতিব্যস্ত তারা ছোটে গুরুগম্ভীর ক্ষেপানাস্রের মত
অথচ ভেতরে সবাই চলছে খুড়িয়ে খুড়িয়ে অসহায় খোঁড়া ত্রিপেয় কুকুরের মত
তাদের চকচকে আমদানিকৃত উঁচু ব্র্যান্ডের লেবাস তাদের স্বত্বাকে নিয়মিত পড়ায় মুখোস
অযথা সুবাস ছড়ানো দামী অথবা নকল ফ্রেগ্রেন্স চেপে ধরে নিশ্বাস
তারা কথা বলে মার্জিত, তাদের কথোপকথনে লুকিয়ে থাকে অসংখ্য হিসাব-নিকাশ
অথবা যাবতীয় অনাকাঙ্ক্ষিত বস্তা বোঝাই গ্লানি

আমি দেখেছি
বেকার কিছু বিভ্রান্ত আত্মা
দৈনিক পত্রিকা ঘেঁটে খুঁজছে জীবনের গন্তব্য
জুতোর তলা ক্ষয়ে ক্ষয়ে এখন তাদের হৃদয়ে ধরেছে ক্ষয়
বাসা থেকে শুরু করে এলাকা সুদ্ধ সবাই তাদের খুঁচিয়ে কথা বলে- সামনে অথবা পেছনে
তবু তারা পকেটে ছেড়া দুটি দশ টাকার ও একটি দুটাকার নোট নিয়ে মাথা নুয়ে হেটে চলে
ইস্কুলে থাকতে গল্পে শুনেছে "অদম্য ইচ্ছার হয় জয়"
কিন্তু আজ তারা জেনেছে ইস্কুলেও কত মিথ্যে আশ্বাস দেয়া হয়

আমি দেখেছি
আমার প্রজন্মের কত মাদকে মাদকে হারিয়ে গিয়েছে চিরতরে
এখন তাদের পাওয়া যায় 'স্পট' নামক অভিশপ্ত জঙ্গলে-
তাদের প্রাণহীন নিথর দেহ আর রক্তাক্ত নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে অযথাই ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে
পরিচিত সবাই এখন ভিনগ্রহী- পরিবার, বন্ধু, প্রিয়জন
এখন তারা জলাতঙ্কিত বেওয়ারিশ কুকুরের মত- এড়িয়ে তাদের চলছে সবাই

আমি দেখেছি
অগণিত স্বপ্ন ব্যস্ত নগরীর রাস্তা পেরুতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনার স্বীকার
আলোহীন অন্ধ-গলিতে পথ খুঁজতে গিয়ে আততায়ীয়ের ছুরিকাঘাতে রক্তাক্ত
কিংবা এইসব স্বপ্ন আটকে আছে জট খুলবে না এমন কোন জ্যামে

আমি দেখেছি
আশার খোঁজে এই নগরীর ধোয়া ঠেলে আকাশে তাকায় বিধাতার তরে
সেখানে আকাশে আকাশে সংঘর্ষে গুড়ো কাঁচের মত ঝর-ঝর করে ভাঙ্গে অনাথ আকাঙ্ক্ষা

আমি দেখেছি
ওই দেয়ালের আড়ালের উনুনে জ্বলতে থাকা গৃহপালিত নারী
সামাজিক নিয়ম, প্রথা, ভয়, লজ্জায় হিংস্র-অমানুষ এক কাপুরুষকে দেবতুল্য ভেবে
একটিবারও বলেনি "আমায় বাঁচাও এসে"
তার কান্না শুধু শুনেছে সযত্নে রাখা বালিশ আর জানালার লৌহ শিক

আমি দেখেছি
ভ্রান্ত বিশ্বাসে মাতাল কাউকে উপদেবতা ভেবে রক্তাক্ত রাজপথ
গণতন্ত্রের নামে পরিবারতন্ত্র কিভাবে রাষ্ট্র-যন্ত্র নষ্ট করে দেয়
বাক-স্বাধীনতার জন্য আজ যাদের স্বীয় স্বরনালী ভেঙ্গে যায়
তারাই সময়ের ব্যবধানে বাহুবলে এসে চেপে ধরে তোমার আমার মুখ
আজ যারা তোমার আমার অধিকারের জন্য প্যান্ডেল টানিয়ে অনশন করে
তারাই একদিন তোমাকে-আমাকে নিয়ে যাবে অনাহারী রাতে

আমি দেখেছি-
তুচ্ছ কারণে পিচাশের হাতে চৌদ্দ খণ্ডিত লাশ হওয়া যুবকের চোখে ভয়;
হিংস্র বন্য কুকুরের পালের মত উন্মাদ জনতার ঔদ্ধত্যয় থেঁতলে যাওয়া বালুময় লাশ;
জীবন্ত বলি হওয়া সেই নিষ্পাপ ধর্ষিত তরুণী বেচে থাকার মানে খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত;
রক্ষণশীল ভণ্ডরা স্বর্গ-নরকের ঠিকাদারি নেবার ভান ধরে ধর্মের নামে দাসত্বের শেকলে বাধবার প্রচেষ্টায়
উদারনৈতিক-বাদীরা ধর্ম নিরপেক্ষতার নামে আজ মূল্যবোধ ডুবিয়ে মারছে মদের গ্লাসে
কথিত কৃতবিদ্য সুশীলেরা পশ্চিম বিশ্ব হতে পৃষ্ঠা ছিঁড়ে এনে শেখাচ্ছে শেখানো বুলি 

আমি দেখেছি
মনুষ্যত্বের অবক্ষয়, রগচটা বাঙালির ঔদ্ধত্য-পনা, এই মানচিত্র জুড়ে অসংখ্য হতাশ আত্মা,
এই সমাজের অবাক সামাজিকতায় ঝরে যাওয়া অসংখ্য অশ্রু
আমি দেখেছি যা আমি দেখতে চাইনি আজ; দেখতে চাইনি গতকাল
...তবুও আমাকে দেখতে হচ্ছে!  

(অসমাপ্ত)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন